বাংলার মাৎস্যন্যায় যুগ:


গৌড়রাজ শশাঙ্কের মৃত্যুর পর এবং পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের সিংহাসন আরোহণের আগে পর্যন্ত প্রায় একশো ধরে বাংলায় প্রচণ্ড রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা যায়। বাংলায় কোন কেন্দ্রীয় শক্তি বলে কিছু ছিল না। এই কারণে বাংলার রাজনৈতিক ঐক্য ভেঙে পড়ে। বাংলায় এসময় ঘাের অরাজকতা, গৃহযুদ্ধ ও ক্রমাগত বিদেশী শত্রুর আক্রমণ চলতে থাকে। বাংলার ইতিহাসে এই সময়কালকে বলা হয় 'মাৎস্যন্যায়'

  • পুকুরের বড়াে মাছ যেমন ছােট মাছদের গ্রাস করে তেমন বাংলার অরাজকতার সুযােগ নিয়ে সবলেরা দূর্বলের ওপর নির্বিচারে অত্যাচার ও শােষণ চালাত তাই এই সময়কালকে মাৎস্যন্যায়ের যুগ বলা হয়।
  • জনৈক জয়নাগ কিছু দিনের জন্য বাংলায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন কিন্তু তার মৃত্যুর পর আবার চরম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।
  • 'আর্যমঞ্জুশ্রী মূলকল্প' থেকে জানা যায়, তখন গৌড় রাজ্য টুকরাে টুকরাে হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাধিক ক্ষুদ্র ও দূর্বল রাজ্যের উৎপত্তি ঘটেছিল।

হিউয়েন সাঙ বাংলা পরিভ্রমণে এসে চারটি স্বাধীন রাজ্যের অস্তিত্ব লক্ষ্য করেছেন। 

এগুলাে হল:-
  • পুণ্ড্রবর্ধন (উত্তরবঙ্গ)।
  • সমতট (দক্ষিণবঙ্গ)।
  • তাম্রলিপ্ত (তমলুক)।
  • কর্ণসুবর্ণ (পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশ)।
এইসব রাজ্যের মধ্যে বিবাদ নিত্য দিনের ঘটনায় পর্যবসিত হয়। এই সুযােগে বৈদেশিক শত্রুরা বাংলায় আক্রমণ চালায়।
যথা:-
  • শৈল বংশের আক্রমণ।
  • কনৌজের যশােধর্ষন কর্তৃক বাংলা আক্রমণ।
  • কাশ্মীররাজ ললিতাদিত্যের বাংলা আক্রমণ।
  • কামরূপরাজের বাংলা আক্রমণ।
বৌদ্ধ পন্ডিত তারানাথ বাংলার অবস্থান সম্পর্কে বলেছেন- তখন বাংলায় স্বাধীন রাজা ছিল না। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র- তারা নিজ নিজ স্বাধীনভাবে রাজত্ব করত। এই কথা ঠিক যে, সমগ্র দেশের শাসক ছিল, কিন্তু নামেমাত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।

0 মন্তব্যসমূহ