এপিকালচার কি? এপিকালচারের অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

জীববিদ্যার যে শাখায় প্রাণীদের বিভিন্ন অর্থনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয় তা অর্থনৈতিক প্রাণীবিদ্যা হিসাবে পরিচিত। এই রকমই একটি শাখা হল এপিকালচার

এপিকালচার সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।


মৌমাছি পালন এপিকালচার নামে পরিচিত।  মৌমাছির বিজ্ঞানসম্মত নাম Apis থেকে এপিকালচার নামকরণ এসেছে। মৌমাছির নিম্নলিখিত প্রজাতিগুলি হল;

এপিস ইন্ডিকা: এটি ভারতীয় মৌমাছির প্রজাতি যাকে সহজেই গৃহপালিত করা যায়।

এপিস ডবসাটা: এই প্রজাতির মৌমাছির আকৃতি দানবের মত হয় এবং সর্বাধিক পরিমাণ মধু উৎপাদনে এটি সক্ষম।

এপিস ফ্লোরিয়া: এটি এক ধরনের শৈলী মৌমাছি, যা থেকে সহজেই মধু নির্গমন করা যায়।

এপিস মেলিফেরা: এটি ইউরোপিয়ান মৌমাছির প্রজাতি যা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

এপিকালচারের জন্য মৌমাছি প্রতিপালনের উদ্দেশ্যে যে স্থান ব্যবহৃত হয় তা এপিয়ারি নামে পরিচিত। মৌমাছি থেকে ব্যবসায়িক উপাদান উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ানোর জন্য ‘খাদি অ্যান্ড ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রিজ কমিশন’ এবং ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক রিসার্চ’ সর্বদা কাজ করছে।

● মৌমাছির সামাজিক সংগঠন:
মৌমাছি একধরনের সামাজিক এবং বহুরূপী পতঙ্গ। তারা একটি অত্যন্ত সুসংগঠিত কলোনিতে বসবাস করে। একটি মৌচাকে ৪০-৫০ হাজার মৌমাছি বসবাস করে। একটি মৌচাকে তিন ধরনের মৌমাছির দেখা মেলে, যথা- রানি মৌমাছি, ড্রোন এবং শ্রমিক মৌমাছি।

রানি মৌমাছি: একটি মৌচাকে কেবলমাত্র একটি রানি মৌমাছি বাস করে। পিউপা থেকে ১৬ দিনের মাথায় রানি মৌমাছি নির্গত হয়ে থাকে। রানি মৌমাছি রাজকীয় জেলি থেকে তার খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে। মৌচাকে একমাত্র সে ডিম পেরে থাকে এবং মৌচাকের সমস্ত মৌমাছির মাতা হিসাবে বিবেচিত হয়।

ড্রোন: পুরুষ মৌমাছি ড্রোন হিসাবে পরিচিত। তাদের জীবদ্দশা ৫ সপ্তাহের জন্য বিদ্যমান থাকে। তারা আকৃতিতে রানি মৌমাছির থেকে ক্ষুদ্র হয় এবং বৃহৎ ডানাযুক্ত, মস্তিষ্ক ও চক্ষুযুক্ত হয়। তাদের কোনো হুল থাকে না।

শ্রমিক মৌমাছি: তারা মৌচাকের সবচেয়ে সক্রিয় সদস্য এবং বাকিদের তুলনায় ক্ষুদ্রাকার হয়। রানি মৌমাছির পারা ডিম থেকে তাদের জন্ম হয়। তারা মৌচাকের একটি কুঠুরিতে বসবাস করে যা ‘কর্মী সেল’ নামে পরিচিত।
শ্রমিক মৌমাছির জীবদ্দশা ১৬ সপ্তাহ বিদ্যমান থাকে।

● এপিকলাচারের মাধ্যমে প্রাপ্ত দ্রব্য:
মধু: এটি সাদা থেকে কালো রঙের হয় , যা স্বাদে মিষ্টি। এটি PH ৩.৯, এটি উন্নত রক্ত পরিশোধক। এছাড়া জিহ্বা এবং খাদ্যনালির ক্ষত নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। মধুতে থাকে ১% ছাই, ২.২১% উৎসেচক ও রঞ্জক, ৮.৮১% ম্যালটোস ও অন্যান্য চিনি জাতীয় দ্রব্য, ১৭.২০% জল, ২১.২৮% ডেক্টোস, ৩৮.৯০% লেবুলোস এবং ১০.৮% লোহা, ক্যালশিয়াম ও সোডিয়াম। মধু প্রস্তুতি কয়েকটি ধাপে হয়ে থাকে, যথা—

  •  প্রথমে শ্রমিক মৌমাছি ফুল থেকে নেকটার সংগ্রহ করে। নেকটার একধরনের পরিষ্কার তরল যাতে ৮০% জল এবং জটিল চিনি জাতীয় দ্রব্য থাকে।
  •  শ্রমিক মৌমাছি এই নেকটার তাদের পাকস্থলি এবং রেক্টামে সংগ্রহ করে রাখে।
  •  উৎসেচক এই জটিল চিনি জাতীয় দ্রব্যকে সরলিকৃত করে তোলে।
  •  এরপর কাঁচা মধু খালি মধুচক্র কুঠুরিতে ছড়িয়ে যায় শুল্ক হবার জন্য।
  •  এরপর এটি জলের সঙ্গে মিশে যায়।
  • রাসায়নিক নিঃসরণ বা ফেরোমোনসের মাধ্যমে মৌচাকের অখণ্ডতা রক্ষিত হয়। মধু গরম লেবু জলের সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে স্থূল ব্যক্তিদের শরীরে স্নেহ পদার্থের পরিমাণ কমে যায়।

মোম: এটি হলুদাকৃতি বা ধূসর বাদামি রঙের হয়। এটি সম্পূর্ণরূপে জলে অদ্রবণীয় কিন্তু জৈব দ্রাবকে সম্পূর্ণরূপে দ্রবীভূত হয়। এটি শ্রমিক মৌমাছির মোম গ্রন্থি থেকে নিসৃত হয়।

বি ভেনোম: এটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি আর্থারাইটিস এবং সর্প দংশনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

প্রোপোলিস: কুটুরির মেরামতি এবং বন্ধনে এটা ব্যবহৃত হয়।

মৌমাছির হুলে কী থাকে?
মৌমাছির হুলে উচ্চ অ্যাসিডযুক্ত মেলিটটিন, ইস্টামাইন এবং অন্যান্য জৈব অ্যামাইন থাকে যা খুবই বিষাক্ত হয়। এর ফলস্বরূপ যন্ত্রণা এবং চুলকানির সৃষ্টি হয়।

0 মন্তব্যসমূহ