ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করো


ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ অধিক ক্ষমতাশালী না উচ্চকক্ষ অধিক ক্ষমতাশালী— এই ধরনের প্রশ্ন জাগতেই পারে। এরজন্যই রাজ্যসভা ও লোকসভার পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টি তিনটি দিক থেকে আলোচনা করা যেতে পারে। নিম্নে এইগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করা হল—


রাজ্যসভা ও লোকসভার সমান ক্ষমতা:
পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ যে-সমস্ত বিষয়গুলিতে সমান ক্ষমতা ভোগ করে, সেগুলি হল—

নির্বাচন সংক্রান্ত: ভারতের রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন, রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির ব্যাপারে উভয় কক্ষই সমান ক্ষমতার অধিকারী।

অপসারণ সংক্রান্ত: হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের অপসারণ, কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যকের সভাপতি ও সদস্যদের অপসারণের ব্যাপারেও উভয় কক্ষের ক্ষমতা সমান।

আইন প্রণয়ন ও সংশোধন অনুমোদন সংক্রান্ত: সাধারণ আইন প্রণয়ন, জরুরি অবস্থার অনুমোদন, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে উভয় কক্ষই সমান ক্ষমতা ভোগ করে থাকে।

লোকসভা রাজ্যসভা অপেক্ষা অধিক ক্ষমতা ভোগ করে:
শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ: সংবিধানের [৭৫ (৩)] নং ধারা অনুসারে মন্ত্রীসভা কেবলমাত্র লোকসভার কাছেই দায়িত্বশীল থাকে। মন্ত্রীসভার গঠন, অস্তিত্ব ও অপসারণের ক্ষেত্রে যাবতীয় ক্ষমতা লোকসভার। এ ব্যাপারে রাজ্যসভার কোনো ক্ষমতা নেই বললেই চলে। লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালে বা লোকসভা অনাস্থা জ্ঞাপন করলে মন্ত্রীসভাকে পদত্যাগ করতে হয়।

অর্থ বিলের ক্ষেত্রে লোকসভার প্রাধান্য:
অর্থ বিলের ব্যাপারে যাবতীয় ক্ষমতা লোকসভার হাতেই ন্যস্ত আছে। প্রকৃতপক্ষে, রাজ্যসভার হাতে কোনো কার্যকর ক্ষমতা নেই। সংবিধান অনুসারে অর্থ বিল বা অর্থ-সম্পর্কিত বিল বা এদের সংশোধনকে রাজ্যসভায় উত্থাপন করা যায় না। অর্থ বা অর্থ বিষয়ক বিল কেবল লোকসভাতেই উত্থাপন করা যায়।

রাজ্যসভা লোকসভা অপেক্ষা অধিক ক্ষমতা ভোগ করে:
সর্বভারতীয় চাকরি সৃষ্টির ক্ষেত্রে রাজ্যসভার প্রাধান্য:
নতুন সর্বভারতীয় চাকরি সৃষ্টির ব্যাপারেও রাজ্যসভার বিশেষ ক্ষমতা আছে। সংবিধানের ৩১২ নং ধারায় রাজ্যসভায় উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশ যদি প্রস্তাব গ্রহণ করে যে, জাতীয় স্বার্থে পার্লামেন্টের এক বা একাধিক সর্বভারতীয় চাকরি সৃষ্টি করা দরকার, তাহলে পার্লামেন্ট সে বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে। এক্ষেত্রেও লোকসভার কোনো মূল ক্ষমতা নেই।

উপরাষ্ট্রপতি পদচ্যুতির ক্ষেত্রে রাজ্যসভার মতামত:
ভারতের উপরাষ্ট্রপতি পদাধিকারবলে রাজ্যসভার সভাপতি। তিনি রাজ্যসভায় সভাপতিত্ব করেন। আবার উপরাষ্ট্রপতির পদচ্যুতি সম্পর্কিত প্রস্তাব কেবল রাজ্যসভাতেই উত্থাপন করা যায়, লোকসভায় উত্থাপন করা যায় না। এইসব কারণেও রাজ্যসভা কিছু বিশেষ ক্ষমতা ও মর্যাদার অধিকারী।

মূল্যায়ন:
পরিশেষে বলা যায়, উপরোক্ত ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের ক্ষমতা সম্পর্কে পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করে উভয় কক্ষকেই সমান ক্ষমতার অধিকারী বলে মনে হতে পারে। তবে লোকসভা যে-সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা ভোগ করে থাকে, তার নিরিখে বিচার করলে রাজ্যসভা অপেক্ষা লোকসভাকেই অধিক শক্তিশালী বলে মনে করা হয়। হয়

0 মন্তব্যসমূহ