বিধান পরিষদের গঠন ও কার্যকাল:


ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আর এই নীতি অনুসরণ করে বিভিন্ন রাজ্যের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা (বিধানসভা ও বিধান পরিষদ) গঠনের ব্যবস্থা সংবিধানে উল্লেখ আছে। তবে বর্তমানে ভারতের ছয়টি রাজ্যে (অন্ধ্র প্রদেশ, বিহার, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র এবং উত্তর প্রদেশ) দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা রয়েছে। যেমন রাজ্য স্তরে ভারতে কেবল ছয় বিধান পরিষদ কাজ করছে। কোনও রাজ্যে আইন পরিষদের অস্তিত্ব রাজ্য বিধানসভার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।

রাজ্য বিধানসভা রাজ্য বিধান পরিষদ  প্রতিষ্ঠা বা বিলোপ করার জন্য একটি প্রস্তাব পাস করতে পারে (১৬৯ নং ধারা)। তারপরে ইউনিয়ন সংসদ ওই রাজ্যের জন্য আইন পরিষদ প্রতিষ্ঠা বা নির্মূল করার জন্য একটি আইন পাস করে।

বিধান পরিষদের আয়তন বিধানসভার আয়তন অনুযায়ী কমবেশি হতেই পারে, তবে বিধান পরিষদের সদস্য সংখ্যা বিধানসভার সদস্য সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি হতে পারে না, আবার ৪০-এর কমও হবে না। এই ব্যবস্থা প্রচলিত হওয়ার একমাত্র কারণ হল, বিধানসভার উপর যেন বিধান পরিষদ প্রাধান্য বিস্তার না করতে পারে অনুচ্ছেদ ১৭১ (১)। সংবিধানে বিধান পরিষদ গঠনের যে পদ্ধতি নির্দেশ করা হয়েছে তা চূড়ান্ত নয়। রাজ্য বিধানমণ্ডলের এই কক্ষের গঠন সংক্রান্ত আইন রচনার চূড়ান্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সংসদকে অর্পণ করা হয়েছে ১৭১ (২) নং ধারায়। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না সংসদ এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করছে ততক্ষণ পর্যন্ত বিধান পরিষদের গঠন সেইরকমই হবে যেরকম সংবিধানে উল্লেখ করা আছে।

বিধান পরিষদের গঠন:
সংবিধানে বলা আছে, বিধান পরিষদ অংশত মনােনীত ও অংশত নির্বাচিত একটি সংস্থা। নির্বাচন হবে পরােক্ষ এবং তা হবে একক হস্তান্তরযােগ্য ভোট দ্বারা সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নীতি অনুসারে। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে সদস্য গ্রহণ করে বিধান পরিষদে নানা ধরনের লােকের সমাবেশ ঘটতে পারে। বিধান পরিষদের ৬ ভাগের মধ্যে ৫ ভাগ সদস্য পরােক্ষভাবে নির্বাচিত হন এবং অবশিষ্ট ১ ভাগ সদস্য রাজ্যপাল দ্বারা মনােনীত হয়ে থাকেন। বিধান পরিষদের সদস্যদের নির্বাচন ও মনােনয়নের পাঁচটি ধাপ রয়েছে―

  • বিধান পরিষদের মােট সদস্য সংখ্যার ১/৩ ভাগ পৌরসংঘ, জেলা পরিষদ এবং অন্যান্য স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠানসমূহের সদস্যদের নিয়ে গঠিত নির্বাচকমণ্ডলী কর্তৃক নির্বাচিত হবেন।
  • প্রায় ১/১২ ভাগ নির্বাচিত হবেন ওই রাজ্যে বসবাসকারী অন্তত তিন বছর আগে স্নাতক হয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত নির্বাচকমণ্ডলী কর্তৃক।
  • প্রায় ১/১২ ভাগ নির্বাচিত হবেন ওই রাজ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চেয়ে নিম্নমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত তিন বছর শিক্ষকতায় নিযুক্ত আছেন এমন ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত নির্বাচকমণ্ডলী কর্তৃক।
  • প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সদস্য রাজ্য বিধানসভার সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন।
  • অবশিষ্ট এক-ষষ্ঠাংশ সদস্য সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিক্ষা, কলা, সমবায় আন্দোলন ও সমাজসেবা বিষয়ে জ্ঞান বা ব্যাবহারিক অভিজ্ঞতা আছে এমন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে রাজ্যপাল কর্তৃক মনােনীত হয়ে থাকেন।


বিধান পরিষদের সদস্যদের যােগ্যতা:
সংবিধানের ১৭৩ নং ধারা অনুযায়ী বিধান পরিষদের সদস্য পদপ্রার্থীকে—
  •  ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
  •  কমপক্ষে ৩০ বছর বয়স্ক হতে হবে।
  •  পার্লামেন্টের ঘােষণা অনুসারে অন্যান্য যােগ্যতার অধিকারী হতে হবে। 
এ ছাড়া দেউলিয়া, বিকৃত মস্তিষ্ক বা সরকারি লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত কোন ব্যক্তি বিধান পরিষদের সদস্য হতে পারবেন না।

বিধান পরিষদের কার্যকাল:
বিধান পরিষদের সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ ৬ বছর ধার্য করা হয়েছে। তবে এটি একটি স্থায়ী কক্ষ বলেই বেশি পরিচিতি লাভ করে। একে কখনােই ভেঙে দেওয়া যায় না। প্রতি দু-বছর অন্তর প্রত্যেক শ্রেণির অন্তর্গত এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর গ্রহণ করতে পারে অনুচ্ছেদ ১৭২ (২) এবং ওই শূন্য আসনগুলিতে নতুন সদস্য নির্বাচিত ও মনােনীত হতে পারেন।

সভা পরিচালনা:
বিধান পরিষদের সভা পরিচালনা করেন সভাপতি। সভাপতি সদস্যদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হয়ে থাকেন। তাকে সাহায্য করার জন্য একজন সহ-সভাপতি সদস্যগণ দ্বারা নির্বাচিত হয়ে থাকেন। সভাপতির অনুপস্থিতিতে সহ-সভাপতি সভার কার্য পরিচালনা করে থাকেন। সভায় কোন আলোচ্য বিষয়ের উপর সমান সংখ্যক ভোট পড়লে সভাপতি একটি নির্ণায়ক ভোট প্রদান করতে পারেন। একইসঙ্গে সভাপতি এবং সহ-সভাপতির পদ শূন্য হলে রাজ্যপাল ওই কক্ষের যে-কোনাে সদস্যকে সভার কার্য পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত করতেই পারেন (১৮৩ নং ধারা)।

বিধান পরিষদের সদস্যদের অপসারণ পদ্ধতি:
বিধান পরিষদ ১৪ দিন পূর্বে নােটিশ দিয়ে, প্রস্তাব উত্থাপন করে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভারতের সমর্থনে বিধান পরিষদের সভাপতি ও সহ-সভাপতিকে অপসারিত করা যেতেই পারে।

0 মন্তব্যসমূহ