ফরাজি আন্দোলন (Farazi movements):


'ফরাজি' শব্দের অর্থ ইসলাম নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্তব্য। বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলনের আদর্শে মুসলিম সমাজে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ফরাজি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ১৮১৮ থেকে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত  ফরাজি আন্দোলন চলে। ফরাজি আন্দোলনের মূল প্রবর্তক ছিলেন হাজি শরিয়তুল্লাহ। হাজি শরিয়তুল্লাহ কুসংস্কারমুক্ত সাম্যবাদী সমাজ গঠনের কথা বলতেন। নীলকর সাহেব ও হিন্দু-মুসলিম জমিদারদের বিরুদ্ধে ফরাজি আন্দোলন গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। ফরিদপুর ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল প্রভৃতি স্থানের গরিব হিন্দু-মুসলিম কৃষক, তাঁতি, কারিগর. শ্রমিক প্রমুখ এই ফরাজি আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। বাংলার নিপীড়িত ও অত্যাচারিত মানুষের কাছে হাজি শরিয়তুল্লাহ ছিলেন এক আদর্শ পুরুষ। হাজি শরিয়তুল্লাহ ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে 'ফরাজি'  নামে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় গঠন করেন। এই সম্প্রদায়ের লোকজনদের নিয়ে তিনি সংস্কার ও সাম্রাজ্যবাদী শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন।


১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে হাজি শরিয়তুল্লাহ মারা গেলে তাঁর পুত্র দুধু মিঁয়া এই আন্দোলনের হাল ধরেন। দুধু মিঁয়া বা মহম্মদ মুসিন ফরাজি আন্দোলনকে একটি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করেন। জমিদার, নীলকর ও সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর স্লোগান ছিল 'যারা জমি চাষ করছে জমি তাদেরই' অথবা 'জমির মালিক ঈশ্বর'। ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ঢাকা, পাবনা,বাখরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নোয়াখালি, খুলনা ছাড়াও তার প্রভাবে এপার বাংলার ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গে ফরাজি আন্দোলনের ভাবধারা ছড়িয়ে পড়ে।  ক্রমে ফরাজি আন্দোলন তার অসাম্প্রদায়িক চরিত্র হারায়। জোরপূর্বক অর্থ আদায় এবং দল ভুক্তির জন্য এর জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত জমিদার ও নীলকরদের চাপে কোম্পানি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে দুধু মিঞাকে কারারুদ্ধ করেন। করারুদ্ধ অবস্থায় ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে দুধু মিঁয়ার মৃত্যু হয়। দুধু মিঁয়ার মৃত্যুর পর ফরাজি আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে।

দুধু মিঁয়ার মৃত্যুর পর পুত্র নোয়া মিঁয়া বা আব্দুল গফুর কিছু কাল পিতার আন্দোলন চালিয়ে যান। আব্দুল গফুর ফরাজি আন্দোলনকে ধর্মীয় আন্দোলনে পরিণত করেন।

0 মন্তব্যসমূহ