ভারতের নির্বাচন কমিশনের গঠন ও কার্যাবলী: (Election Commission of India).


ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু, অবাধ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ করার উদ্দেশ্যে ভারতীয় সংবিধানের পঞ্চদশ অংশে (Part XV) একটি নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচন সংক্রান্ত কিছু বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতের নির্বাচন কমিশন ১৯৫০ সালে ২৪ শে জানুয়ারী প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই কারণে ২৪ শে জানুয়ারী ভারতে জাতীয় ভোটার দিবস পালন করা হয়।


নির্বাচন কমিশনের গঠন:
সংবিধানের ৩২৪ (১) নং ধারা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের হাতে নির্বাচন পরিদর্শন, পরিচালন এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৩২৪ (২) নং ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন একজন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনার নিয়ে গঠিত হবে।
        অন্য কমিশনারদের সংখ্যা সম্বন্ধে সংবিধানে কিছু বলা হয়নি। রাষ্ট্রপতি অন্যান্য কমিশনারের সংখ্যা নির্ধারণ করেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কমিশনারদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করে থাকেন। এ ছাড়া আঞ্চলিকভাবেও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়।
         প্রতিটি সাধারণ নির্বাচন ও উপনির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করার জন্য কমিশনের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি ছয় মাসের কার্যকালের মেয়াদে আঞ্চলিক কমিশনারদের নিয়োগ করেন। নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগ শোনা এবং তারপর তাৎক্ষণিক রায়দান করাও তাঁদের কাজ। বর্তমানে প্রতিটি রাজ্যে একজন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক রয়েছেন।
এ ছাড়া ১৯৬৬ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুসারে প্রতি জেলায় একজন জেলা নির্বাচনি অফিসার নিয়োগেরও ব্যবস্থা রয়েছে। উপরন্তু নির্বাচন কমিশনের বিবিধ দায়িত্ব পালনের জন্য রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন কর্মচারী নিয়োগ করেন।


নির্বাচন কমিশনের সদস্য সংখ্যা:
১৯৫০ থেকে ১৯৮৯ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সাথে দুইজন অতিরিক্ত নির্বাচন কমিশনার যুক্ত ছিলেন। ১৯৯০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই দুটি অতিরিক্ত পদ বিলুপ্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালের ১ অক্টোবর পুনরায় দুইজন অতিরিক্ত নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত করা হয় এবং এই সংক্রান্ত আইনটি সংশোধনও করা হয়। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে তিন জন নির্বাচন কমিশনার বহাল রয়েছেন। এঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তই নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত হিসেবে বলবৎ হয়। ভারতীয় সংসদের আইন অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনারদের মেয়াদ স্থির করা হয়।

নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের কার্যকাল ও পদচ্যুতি:
নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের চাকরির শর্তাদি স্থির করার দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির হাতে রয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রে সংসদ প্রণীত আইন অনুসারে রাষ্ট্রপতি ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। বর্তমানে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারসহ নব নিযুক্ত দুজন কমিশনারের কার্যকাল ছয় বছর রাখা হয়েছে। নির্বাচনি ব্যবস্থার নিরপেক্ষতার কথা ভেবে সংবিধানের ৩২৪ (৫) নং ধারায় মুখ্য নির্বাচনী কমিশনারের অপসারণের জন্য এক বিশেষ পদ্ধতির (ইমপিচমেন্ট) কথা বলা হয়েছে।
           প্রমাণিত অকর্মণ্যতা এবং অসদাচরণের অভিযোগক্রমে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে সংসদের উভয় কক্ষের অধিকাংশ এবং উপস্থিত ও ভোটদানকারী দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি পদচ্যুত করতে পারেন। সংবিধানে আরও বলা হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশনারের পদে নিয়োগ করার পর, তাঁর চাকরির শর্ত ইত্যাদি এমনভাবে পরিবর্তন করা যাবে না যা তাঁর স্বার্থের পরিপন্থী হয়।

ভারতে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যাবলী:
ভারতীয় সংবিধানের ৩২৪ (১) নং ধারা অনুযায়ী কেন্দ্ৰীয় আইনসভা, রাজ্য আইনসভা, রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্রান্ত কাজকর্মের তত্ত্বাবধান, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের যাবতীয় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হাতে দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন এই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করার জন্য নিম্নলিখিত কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে—

ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সংশোধন: লোকসভা ও বিধানসভার প্রতিটি সাধারণ নির্বাচন ও উপনির্বাচনের প্রাক্কালে ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সংশোধন নির্বাচন কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

নির্বাচনী কর্মী নিয়োগ: লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচনগুলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাচনি কর্মী নিয়োগের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালকে অনুরোধ করে থাকে।

ভোটদাতাদের সচিত্র পরিচয় পত্ৰ প্ৰদান: ভোটদাতাদের সচিত্র পরিচয়পত্র তৈরি করা এবং সেগুলি যথাযথভাবে বিলি বণ্টন করা নির্বাচন কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

নির্বাচনী প্রতীক বণ্টন: নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলিকে নির্বাচনি প্রতীক বণ্টন করা এবং প্রতীক নিয়ে কোনো দলের মধ্যে বিরোধের নিষ্পত্তির ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের রয়েছে।

দলীয় স্বীকৃতি প্রদান বা প্রত্যাহার: প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী নথিভুক্ত হতে হয়। নির্ধারিত মান অনুসারে রাজনৈতিক দলগুলিকে জাতীয় রাজ্য বা আঞ্চলিক এবং অন্যান্য স্বীকৃত দল এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়। রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি প্রত্যাহার করে নেওয়ার ক্ষমতাও নির্বাচন কমিশনের হাতে রয়েছে।

নির্বাচন বা উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা: প্রতিটি নির্বাচন বা উপনির্বাচনের দিনক্ষণ স্থির করা ও ঘোষণার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনারের।

মনোনয়নপত্র পেশ ও নাম প্রত্যাহারের তারিখ ঘোষণা: নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হওয়ার পর কমিশন প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র পেশ ও নাম প্রত্যাহারের তারিখ ঘোষণা করে থাকে। মনোনয়নপত্র গুলি পরীক্ষা করে দেখার পর বৈধ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা নির্বাচন কমিশনের অন্যতম দায়িত্ব।

নির্বাচনী আচরণবিধি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন: সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সুনিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন নির্বাচনি আচরণবিধি প্রণয়ন করে থাকে। এই আচরণবিধি যাতে যথাযথভাবে মেনে চলা হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখে কমিশন।

নির্বাচনী পর্যবেক্ষক নিয়োগ: নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনি পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে থাকে।

নির্বাচনী স্থগিত বা বাতিল ঘোষণা: নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের রিপোর্ট অনুসারে কোনো কেন্দ্ৰে বুথ দখল, জাল ভোট প্রদান ইত্যাদি ঘটনা ঘটে থাকলে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কেন্দ্র বা ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত বা বাতিল ঘোষণা করতে পারে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে পুনর্নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করার ক্ষমতাও কমিশনের হাতে রয়েছে।

ভোট গণনা ও ফলাফল প্রকাশ: নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ভোটগণনা ও ভোটের ফলাফল প্রকাশ এবং প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্র সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীকে নির্বাচিত হওয়ার শংসাপত্র প্রদান নির্বাচন কমিশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

পরামর্শদান: সংসদের কোনো সদস্য বা রাজা আইনসভার কোনো সদস্যের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি অথবা রাজ্যপালকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকে নির্বাচন কমিশন।

রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন: রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করে কমিশন।

কেন্দ্রীয় ও রাজ্য আইনসভার উচ্চকক্ষের নির্বাচন: কেন্দ্রীয় আইনসভার উচ্চকক্ষ (রাজ্যসভা) এবং রাজা আইনসভার উচ্চকক্ষ (বিধান পরিষদ) এর সদস্য নির্বাচনের যাবতীয় ব্যবস্থা কমিশন করে।

প্রার্থীদের নির্বাচন ব্যয় পরীক্ষা: নির্বাচনে যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তাঁদের নির্বাচনী ব্যয় পরীক্ষা করা কমিশনের কাজ।


মূল্যায়ন:
গণতন্ত্রের সাফল্যের ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য শর্ত হল অবাধ ও স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা। কিন্তু সমালোচকদের মতে ভারতবর্ষে অবাধ ও স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ব্যাপারে উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হয়নি। কারণ যে নির্বাচন কমিশনের ওপর ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সংবিধানের নানা ত্রুটি বিচ্যুতি সেই নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে বাধাস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, কমিশনের গঠন, সদস্যদের যোগ্যতা, কার্যকালের মেয়াদ, ক্ষমতা ও কার্যাবলী প্রভৃতি ব্যাপারে সংবিধানে বিস্তারিতভাবে কিছু বলা হয়নি। তৎপরিবর্তে এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা মূলত রাষ্ট্রপতির হাতে, কার্যত প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। ফলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং কমিশনের অন্যান্য সদস্য হিসাবে কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের আস্থাভাজন ব্যক্তিরাই নিযুক্ত হবার সুযোগ পান।

দ্বিতীয়তঃ মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কার্যকালের মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকায় অনেক সময় মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকেই নিজের স্বাধীন ভূমিকা পালনের পরিবর্তে কেন্দ্রের অনুগ্রহ লাভে বেশি সচেষ্ট হতে দেখা যায়।

       অনুরূপভাবে অবসর গ্রহণের পর মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের অন্য কোন চাকরি বা পদে নিযুক্ত হতে বাধা না থাকায় অনেক সময় মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে সরকারী অনুগ্রহ লাভে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। এইভাবে সরকারের অনুগত হয়ে থাকার পুরস্কারস্বরূপ অবসর গ্রহণের পর কে. ডি. কে. সুন্দরকে আইন কমিশনের সভাপতি এবং সুকুমার সেনকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল।

      অন্যদিকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস. এল, শাকধেরের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় মনঃপুত না হওয়ার ফলে তিনি সমস্তরকম সরকারী অনুগ্রহ লাভ থেকে বঞ্চিত হন।

তৃতীয়তঃ নির্বাচনের দিন ঘোষণা, নির্বাচন স্থগিত রাখা সম্পর্কিত নির্বাচন কমিশনের বহু সিদ্ধান্তই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গ্রহণ করা হয় বলে সমালোচনা করা হয়। ১৯৯২ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত পশ্চিমবঙ্গের বালিগঞ্জ এবং বিহারের একাধিক লোকসভার উপনির্বাচনে নির্বাচন কমিশন বেশ কয়েকটি বুথে পুনরায় ভোটগ্রহণের নির্দেশ দিলেও নয়াদিল্লীর উপনির্বাচনে ব্যাপক নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের ঘটনা সত্ত্বেও কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয় নি। সমালোচকদের মতে, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের চাপের কাছে নতি স্বীকার করার ফলে কমিশন কার্যত কেন্দ্রীয় শাসক দলের রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

চতুর্থতঃ নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মচারীমণ্ডলী না থাকায় নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে কমিশনকে হয় কেন্দ্রীয় সরকার অথবা রাজ্য সরকারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হয়। বলাবাহুল্য এই নির্ভরশীলতা কমিশনের নিরপেক্ষ ও স্বাধীন ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

পঞ্চমতঃ ভোটার তালিকায় কারচুপি, জাল ভোট, ছাপ্পা ভোট, বুথ দখল, দুর্নীতি এবং আরও নানান অনিয়ম ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থাকে একটা প্রহসনে পরিণত করেছে। অনেকে এসবের জন্য কমিশনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন।

      নির্বাচন কমিশনের এইসব সাংগঠনিক দুর্বলতা ও বাস্তব ভূমিকা প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে অধ্যাপক এস. আর. মহেশ্বরী নির্বাচন কমিশনকে ভারতীয় গণতন্ত্রের দুর্বলতম স্তম্ভ (weakest pillar of our democracy) বলে উল্লেখ করেছেন।

তবে ভারতের ভূতপূর্ব নির্বাচন কমিশনার টি. এন. শেষনের ক্ষেত্রে অধ্যাপক মহেশ্বরীর জন্য কমিশন কংগ্রেস (ই) দলকে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দেন। এছাড়া আরও কয়েকটিতবে ভারতের ভূতপূর্ব নির্বাচন কমিশনার টি. এন. শেষনের ক্ষেত্রে অধ্যাপক মহেশ্বরীর জন্য কমিশন কংগ্রেস (ই) দলকে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দেন।

উপরোক্ত মন্তব্য মোটেই খাপ খায় না। তিনি তাঁর কার্যাবলীর মাধ্যমে বুঝিয়ে দেন যে, নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারের বা কোন রাজনৈতিক দলের কেনা গোলাম নয় এবং তা করতে গিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরাগভাজন হয়ে পড়েন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, সংবিধান নির্বাচন কমিশনের ওপর যে গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছে তা যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে হলে কমিশনকে কোন বিশেষ ব্যক্তি বা দল বা গোষ্ঠীর বংশবদ হয়ে না থেকে নির্ভীক ও নিঃশঙ্ক চিত্তে কাজ করে যেতে হবে। তিনি চেয়েছিলেন নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে; তিনি চেয়েছিলেন প্রতিটি রাজনৈতিক দলই উপযুক্ত আচরণবিধি মেনে চলুক, ভোটার তালিকা ও ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে কারচুপি বন্ধ হোক, প্রত্যেক বৈধ ভোটারের সচিত্র পরিচয়পত্র থাকুক। যে দক্ষতার সঙ্গে শেষন বিহার ও উত্তরপ্রদেশের মত রাজ্যে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছেন এবং দুটি সাধারণ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করিয়েছেন, ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। ভারতের বর্তমান নির্বাচন কমিশন এম. এস. গিলও ইতিমধ্যেই তাঁর কাজে যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৭ সালের ৩১শে মে-র মধ্যে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে তার সাংগঠনিক নির্বাচন শেষ করার জন্য কমিশন যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা অমান্য করার বলিষ্ঠ পদক্ষেপ শ্রী গিল গ্রহণ করেন।
       অতঃপর নির্বাচন কমিশনকে ভারতীয় গণতন্ত্রের ‘দুর্বলতম স্তম্ভ' বলা সমীচীন হবে বলে মনে হয় না।

0 মন্তব্যসমূহ