জাদুঘরের প্রকারভেদ আলোচনা করো: (Types of museum).


পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আজ অসংখ্য জাদুঘরের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন জাদুঘর বিভিন্ন ধরনের, যেমন— শিল্প, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয়ের সামগ্রী সংরক্ষণ করে সেসব বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করে। বর্তমানে বিশ্বের ২০২টি দেশে প্রায় ৫৫,০০০-এরও বেশি জাদুঘর গড়ে উঠেছে। প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে জাদুঘরে সংরক্ষিত বস্তুগুলির ভিত্তিতে এইসব জাদুঘরকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা যায়, যেমন—


বিশ্বকোশ জাদুঘর: বিশ্বকোশ জাদুঘর বলতে সুবৃহৎ বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের জাতীয় জাদুঘরকে বোঝায়, যেখানে বিপুল সংখ্যক দর্শকের প্রবেশের সুযোগ থাকে এবং স্থানীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন বিষয়ে অসাধারণ সংগ্রহ থাকে।
যেমন:— লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়াম।

প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর: প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে কেবলমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন- সমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং প্রদর্শন করা হয়। 
এই ধরনের যাদুঘর দুইভাবে বিভক্ত। যথা-
  • খোলা জায়গায় অবস্থান (রোমান ফোরাম)।
  • অট্টালিকার অভ্যন্তরে অবস্থান (ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম)।

শিল্প জাদুঘর: শিল্প জাদুঘরে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।
যেমন:– অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসমোলিয়ান জাদুঘর।

ঐতিহাসিক জাদুঘর: কোনো প্রাচীন ঐতিহাসিক গৃহকে কেন্দ্র করে এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়।
যেমন:— মুর্শিদাবাদে অবস্থিত হাজারদুয়ারি।

জীবন্ত জাদুঘর: প্রাচীন যুগের মানুষের জীবনযাত্রা অনুকরণ করে যেসব জাদুঘরে দর্শকদের দেখানো হয় তা জীবন্ত জাদুঘর নামে পরিচিত।
যেমন:– ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে আর্থর হ্যাজেলিয়াস প্রতিষ্ঠিত সুইডেনের ‘স্কানসেন মিউজিয়াম’।

সমুদ্র জাদুঘর: প্রাচীন কালের সমুদ্রজীবন-সংক্রান্ত সংগ্রহশালা। এখানে বিশেষ করে জাহাজ-সংক্রান্ত নিদর্শন প্রদর্শনকরা হয়।
যেমন:— ভার্জিনিয়ার মেরিনার্স মিউজিয়াম।

সামরিক জাদুঘর: কোনো দেশের সামরিক বাহিনী ও যুদ্ধ-সংক্রান্ত নানা নিদর্শন প্রদর্শন করা হয়।
যেমন:— দ্য ন্যাশনাল ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড ওয়ার মিউজিয়াম, কানাডিয়ান ওয়ার মিউজিয়াম প্রভৃতি।

বিজ্ঞান জাদুঘর: বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিবর্তন, বিজ্ঞানের অগ্রগতি, বিস্ময় প্রভৃতি বিষয়ে নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করে থাকে এই জাদুঘর।
যেমন:— শিকাগোর ‘মিউজিয়াম অফ সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।

জৈব পার্ক ও বৃক্ষের বাগান: চিড়িয়াখানা এবং বৃক্ষের বাগান এক ধরনের জাদুঘর বলে বিবেচিত হয়। কারণ, জাদুঘরের মতো এগুলিরও লক্ষ্য হল নিদর্শন সংগ্রহ সংরক্ষণ, প্রদর্শন শিক্ষাদান প্রভৃতি।
যেমন:— লন্ডন জু, শিকাগো বোটানিক গার্ডেন, কলকাতা চিড়িয়াখানা প্রভৃতি।

শিশুদের জাদুঘর: সম্পূর্ণভাবে শিশুদের কথা মাথায় রেখে এই ধরনের জাদুঘর গড়ে তোলা হয়। শিশুদের অপ্রথাগতভাবে শিক্ষার জন্য এটি বিশেষভাবে পরিকল্পিত।
যেমন:— কলকাতার ‘নেহরু চিল্ড্রেন মিউজিয়াম'।

চলমান জাদুঘর: যখন কোনো চলমান যানের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে ঐতিহাসিক বা দুর্লভ নিদর্শনসমূহ দর্শকদের সামনে প্রদর্শন করা হয়, তখন তাকে চলমান জাদুঘর বলে।
যেমন:– ২০১১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষ্যে তাঁর জীবনকাহিনিকে কেন্দ্র করে ভারতীয় রেল একটি ট্রেনে জাদুঘর তৈরি করে।

0 মন্তব্যসমূহ