কর্তব্য কি? নাগরিকের কর্তব্য বলতে কি বোঝ?


কর্তব্য কি?

উঃ- কর্তব্য বলতে দায়িত্ব পালনকে বোঝায়। কর্তব্য বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যেমন- সামাজিক কর্তব্য, নৈতিক কর্তব্য, রাজনৈতিক কর্তব্য ইত্যাদি। বস্তুতঃ কৰ্তব্য হল যে সকল কাজ করা উচিত এবং যে সকল কাজ করা উচিত নয় তা করা বা না করা থেকে বিরত থাকা।

নৈতিক কর্তব্য কি?
উঃ- নৈতিক কর্তব্যের উৎস হল নৈতিকতা। যে কর্তব্য পালন না করলে কোনো শাস্তির ভয় থাকে না, কিন্তু বিবেকের দংশন ও সামাজিক নিন্দা সহ্য করতে হয়। সামাজিক দায়িত্ব ও বিবেকবোধ থেকেই সৃষ্টি হয় নৈতিক কর্তব্যের। যেমন- বৃদ্ধ পিতামাতার দেখাশোনা করা, গুরুজনদের শ্রদ্ধাকরা ইত্যাদি।

আইনগত কর্তব্য কি?
উঃ- আইনগত কর্তব্য হল মূলতঃ রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য। আইনগত কর্তব্যের পিছনে আইনের সমর্থন থাকে। ফলে এই কর্তব্য পালন না করলে শাস্তির ভয় থাকে। সেই কর্তব্যকে আইনগত কর্তব্য বলে। যেমন- রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা, সময়মত কর প্রদান করা ইত্যাদি।

নাগরিকের কর্তব্য বলতে কি বোঝ?
উঃ- নিজের ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপযোগী অধিকারভোগের জন্য প্রতিটি নাগরিকতে কতকগুলি দায়িত্ব পালন করতে হয়। এরূপ দায়িত্ব পালনকেই কর্তব্য বলে। কর্তব্য পালন ছাড়া অধিকার ভোগের কথা কল্পনা করা যায় না। তাই অধিকার ও কর্তব্য পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল।

নাগরিকদের বিভিন্ন প্রকার কর্তব্য:
উঃ- নাগরিককে বিভিন্ন ধরণের কর্তব্য পালন করতে হয়। যথাক্রমে:-
  •  পরিবারের প্রতি নাগরিকের কর্তব্য।
  •  সমাজের প্রতি নাগরিকের কর্তব্য।
  •  রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের কর্তব্য।

পরিবারের প্রতি নাগরিকের কর্তব্য:
উঃ- গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনের একক হল পরিবার। তাই সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্যের হাতেখড়ি হল পরিবারের মধ্যে। পরিবারের পিতা-মাতা, স্ত্রী, পুত্র-কন্যার প্রতি দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েই মানুষ সমাজের বৃহত্তর ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের জন্য তৈরী হতে পারে। পিতা-মাতা এবং অন্যান্য গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা, স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, পুত্র-কন্যার প্রতি বাৎসল্য এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রতি যথোচিত মর্যাদা দিয়ে পরিবার গড়ে তুললে পরিবার কেবলমাত্র সুখেরই হয় না, তা দেশের সুনাগরিক গড়ার একটি পীঠস্থানে পরিণত হয়। তাই নাগরিকের পরিবারের প্রতি কর্তব্য দেশের প্রতি তার বৃহত্তম কর্তব্যেরই একটি অংশ।

সমাজের প্রতি নাগরিকের কর্তব্য:
উঃ- মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। তাই একমাত্র সমাজের মধ্যে থেকেই মানুষ তার প্রকৃতির পূর্ণ বিকাশ সাধন করতে পারে সমাজব্যতীত নয়। সমাজের মধ্যে থেকে, সমাজের এক অবিচ্ছেদ্য অংশরূপেই সে অধিকারগুলি ভোগ করে এবং সেগুলিকে তার জীবন বিকাশের কাজে লাগায়। সমাজ ছাড়া মানুষ তার অধিকারগুলি ভোগ করতে পারে না এবং তার জীবনের পূর্ণতম বিকাশ সাধন করতে পারে না। তাই সমাজের প্রতি নাগরিকের কর্তব্য হল তার অধিকার ভোগেরই অপর একটি দিক। তাই মানুষের কর্তব্য হল অপরের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। নাগরিক জীবনের সুখ ও সমৃদ্ধি ব্যক্তির সামাজিক কর্তব্যের ওপরই নির্ভরশীল।

অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক ব্যাখ্যা:
উঃ- অধিকারের সঙ্গে কর্তব্যের অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক বিদ্যমান। কেননা, অন্যেরা দাবি পূরণ করতে রাজি না হলে অধিকার থাকে না। একজনের কর্তব্য মানেই আর একজনের অধিকার। কারণ, একজনের কর্তব্য পালনের উপরই অন্যের অধিকার নির্ভর করে। সুতরাং একথা বলা যায় যে অধিকারের মধ্যেই কর্তব্য নিহিত।

0 মন্তব্যসমূহ