মহকুমা শাসকের ক্ষমতা ও কার্যাবলী: (Sub Divisional Officer).


জেলা প্রশাসনের পরবর্তী স্তরে রয়েছে মহকুমা প্রশাসন। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলাকে কয়েকটি মহকুমায় ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেক মহকুমার প্রশাসনের প্রধান হলেন মহকুমা শাসক। মহকুমা স্তরে মহকুমা শাসক হলেন রাজ্য সরকারের মুখ্য প্রতিনিধি।


মহকুমা শাসকের ক্ষমতা ও কার্যাবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল -

মহকুমা শাসকের প্রশাসনিক ক্ষমতা:
মহকুমা স্তরে মহকুমা প্রশাসনের প্রধান হলেন মহকুমা শাসক। মহকুমার আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধির কয়েকটি নির্দিষ্ট ধারা প্রয়োগ করার ক্ষমতা তাঁকে দেওয়া হয়েছে। মহকুমার মধ্যে পুলিশ বিভাগের কাজকর্মের তিনি তদারকি করে থাকেন। এ ছাড়া মহকুমার রাজস্ব বিভাগের কর্মচারীদের নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ইত্যাদি বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। মহকুমার জনগণের সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হয়েছে।

মহকুমা শাসকের রাজস্ব সংক্রান্ত ক্ষমতা:
মহকুমা শাসক মহকুমার প্রধান আধিকারিক হিসেবে মহকুমার প্রশাসন ছাড়াও রাজস্ব বিভাগের দায়িত্বও পালন করেন। এজন্য তাঁকে মহকুমার রাজস্ব আধিকারিক বলা হয়। ভূমি রাজস্ব সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তি, রাজস্ব বিভাগের তত্ত্বাবধান ও পরিদর্শন, খাজনা নির্ধারণ ও রাজস্ব সংগ্রহ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তিনি পালন করেন। জমির সীমানা নির্দেশ ও জমির রেকর্ড তৈরি ও সংরক্ষণের দায়িত্বও তাঁর হাতে রয়েছে।

মহকুমা শাসকের বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা:
নির্দেশমূলক নীতি অনুসারে বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসনে বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগকে স্বতন্ত্র করে দেওয়ার ফলে মহকুমা শাসক বর্তমানে আর বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন না। অবশ্য মহকুমার প্রশাসনিক ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তাঁর হাতে কিছু আধা বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- জরুরিকালীন অবস্থায় সতর্কতামূলক আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ ও প্রয়োগ, এলাকার আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স অনুমোদন, সাধারণ ব্যাবসা ও অন্যান্য লাইসেন্স প্রদান ইত্যাদি।

মহকুমা শাসকের উন্নয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতা:
মহকুমা শাসকের হাতে মহকুমার উন্নয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পগুলির রূপায়ণের এবং জাতীয় সম্প্রসারণ পরিকল্পনা ও যাবতীয় সরকারি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের তিনি তত্ত্বাবধান করে থাকেন। এ ছাড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয় জনিত সমস্যার (যেমন, খরা, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, মহামারি ইত্যাদি) ক্ষেত্রে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জরুরি কাজকর্ম পরিচালনা করেন তিনি। উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হয়েছে।

মহকুমা শাসকের সমন্বয় সংক্রান্ত ক্ষমতা:
মহকুমা স্তরের বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে জেলা শাসককে তিনি নিয়মিত অবহিত করে থাকেন। অন্যদিকে পঞ্চায়েত সমিতি, বিডিও এবং স্থানীয় জনগণের সঙ্গেও তাঁকে ঘনিষ্ঠ জনসংযোগ রেখে চলতে হয়। এভাবে মহকুমা শাসক জেলা শাসকের সহকারীরূপে প্রশাসনে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেন। মহকুমার এলাকার মধ্যে রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের, যেমন পশুপালন, জনস্বাস্থ্য, কৃষি, রাজস্ব ইত্যাদির সমন্বয় সাধনের দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হয়েছে।

পরিশেষে বলা যায়, বর্তমানে পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থার উদ্ভব হওয়ায় এবং ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকদের কাজকর্মের প্রসার ঘটায় মহকুমা শাসকের একক ভূমিকা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।

0 মন্তব্যসমূহ