'পডসল' কথাটি এসেছে রুশ শব্দ ‘জোলা’ থেকে যার অর্থ ছাই বা ভস্ম। পডসল মৃত্তিকার ‘A2’ স্তরটি ধূসর বা ছাই বর্নের হওয়ায় এই মৃত্তিকার নাম পডসল হয়েছে। সরলবর্গীয় বনাঞ্চলের সৃষ্ট আদর্শ পরিলেখ বিশিষ্ট একপ্রকার আঞ্চলিক মৃত্তিকা হল পডসল।
পডসল মৃত্তিকার উৎপত্তি:
শীতল ও আর্দ্র নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত (৫০ থেকে ১০০ সেমি) ও উয়তা (৩°সে. থেকে ১০°সে.) অনেক কম। এখানে বাষ্পীভবন অপেক্ষা বৃষ্টিপাত বেশি, জলবায়ু শীতল ও আর্দ্র প্রকৃতির। এই পরিবেশে সরলবর্গীয় উদ্ভিদ প্রচুর জন্মায়। আর্দ্র পরিবেশের জন্য ধৌত প্রক্রিয়া বেশি হয় এবং ধাতব ক্যাটায়নগুলি জলের সাথে মাটির নীচে চলে যায়। ফলে উপরের স্তরের অম্লতা বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে উদ্ভিদের দেহাবশেষ পচে একটি অম্লধর্মী জৈবস্তর সৃষ্টি হয়। মৃত্তিকার উপরের স্তরের অপসৃত পদার্থ যথা লােহা ও অ্যালুমিনিয়াম-এর অক্সাইড বা সেসকুইঅক্সাইড নীচের স্তরে সঞ্চিত হয়। কাদার সঙ্গে কিছু সূক্ষ্ম পলি থাকায় B স্তরটি জমাট বেঁধে যায় ও অপেক্ষাকৃত অপ্রবেশ্য হয়। এই স্তরটি শুকিয়ে শক্ত হয়ে হার্ডপ্যান তৈরি করে। মাটির ওপরের স্তরে কেবলমাত্র সিলিকার একটা আস্তরণ থেকে যায়। সিলিকার পরিমাণ বেশি থাকায় মাটি ধূসর ছাই রঙের হয় (রুশ শব্দ Sola র অর্থ হল Ash)। মাটি গঠনের এরূপ প্রক্রিয়াকে পড়সলিকরণ (Podsolisation) বলে।
পডসল মৃত্তিকার অবস্থান:
আদ্র নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর অন্তর্গত সরলবর্গীয় বনভূমি অঞ্চলে পডসল মৃত্তিকা বলয় গড়ে ওঠে। ইউরােপ ও এশিয়ায় এই বলয়টি উত্তরে তুন্দ্রা ও দক্ষিণে স্তেপ জলবায়ুর মধ্যে সীমাবদ্ধ। কানাডার তৈগা বনভূমি অঞ্চলে এবং ভারতে হিমালয়ের সরলবর্গীয় অরণ্যাঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়। দক্ষিণ গােলার্ধে এইরূপ মৃত্তিকার অবস্থান প্রায় দেখা যায় না।
পডসল মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য:
- পডসল মাটির A, B ও C এই তিনটি স্তর অতি সুস্পষ্ট। A স্তরের ওপরের অংশ থেকে সেসকুইঅক্সাইড ও হিউমাস জাতীয় পদার্থ অপসারিত হয় বলে এই স্তর সাধারণত হালকা অথবা ধূসর ছাই রঙের হয়। B স্তরে সেসকুইঅক্সাইড ও হিউমাস সঞ্চিত হওয়ায় এই স্তরের রং গাঢ় বাদামি হয়।
- পডসল মৃত্তিকার তিনটি স্তরই (A, B, C) আম্লিক।
- মাটির pH মান ৫ পর্যন্ত হয়।
- এটি ধূসর বর্ণের। কখনাে কখনাে বাদামি বর্ণেরও হয়।
- এইরূপ মাটির উর্বরাশক্তি কম। এই মাটিতে শণ, যব, ওট, সয়াবিন ও ভুট্টার চাষ হয়।
0 মন্তব্যসমূহ