যে মাটিতে উর্বর পলি ,কাঁকর, বালি ,কাদা ইত্যাদি সহ অন্যান্য পৌষ্টিক উপাদানগুলির যেমন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়াম সঞ্চিত থাকে, তাকে পলি মাটি বলে।
নদী বিধৌত অঞ্চলের দুপাশের সমভূমিতে ধীরে ধীরে পলি পড়ে পলি মাটির সৃষ্টি হয়। নিম্ন গঙ্গা সমভূমিতে পলি মাটি দেখা যায়।পলি মাটি কিভাবে সৃষ্টি হয়:
নদী সাধারণত তার নিম্ন গতিতে সঞ্চয় কাজ করে থাকে। নদীতার উচ্চ গতিতে ক্ষয় কার্য চালিয়ে, পলি, বালি, কাদা, নুড়ি, কাঁকর নিম্নগতির দিকে বয়ে নিয়ে আসে। নদীর প্লাবন বা বন্যার সময় নদীর দুকুল ছাপিয়ে নদীর দুইপাশের সমভূমিতে বয়ে আনা পলি বালি, কাদা, নুড়ি, কাঁকর ইত্যাদি সঞ্চয় করে উর্বর পলি মাটি তৈরি করে।
পলি মাটির উপাদান:
পলি মাটিতে ৫০-৬০ শতাংশ পলি থাকে।
পলি মাটিতে ২০-৩০ শতাংশ কাদা থাকে।
পলি মাটিতে ১৫-২০ শতাংশ বালি থাকে।
পলি মাটির বৈশিষ্ট্য:
- পলি মাটির জল ধারণ ক্ষমতা, বায়ু চলাচল ইত্যাদি মাঝারি প্রকৃতির।
- পলি মাটি নরম ও মোলায়েম প্রকৃতির হয়।
- পলি মাটি যে অবস্থায় নরম ও আঠালো হয় এবং শুকিয়ে গেলে শক্ত পিন্ডে পরিণত হয়।
- উর্বর পলি, বালি এবং কাদার মিশ্রনে এই মাটি তৈরি।
- পলি মাটিতে অনেক পৌষ্টিক মৌল যেমন- ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি সঞ্চিত থাকে।
- পলি মাটি ফসল ধান ,গম, যব ,ভুট্টা ,সবজি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
পলি মাটিতে ফসল ভালো হওয়ার কারণ:
দোআঁশ মাটির মতো পলি মাটি ও খুব উর্বর। কারণ এই মাটিতে পটাশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি পুষ্টি মৌল থাকে। পলি মাটিতে ৫০-৬০ শতাংশ পলি থাকে।
পলি মাটির জল ধারণ ক্ষমতা অধিক। তাই উদ্ভিদ সহজে এই মাটি থেকে খাদ্য তৈরির জন্য জল সংগ্রহ করতে পারে।
পলি মাটি খুব সহজে মাটির আদ্রতা বজায় রাখতে পারে। পলি মাটি প্রশমিত প্রকৃতির অর্থাৎ আম্লিক বা ক্ষারীয় কোনোটিই নয়।
এই কারণে পলি মাটিতে ধান, গম, যব, ভুট্টা, আখ, তিল সহ-প্রভৃতি শস্য ও ফসল ভালো হয়।
পলি মাটির ব্যবহার:
ধান, গম, যব, পাট ও রবিশস্য খুব ভালো হয় এই মাটিতে।
পলি মাটির শ্রেণি বিভাগ:
পাললিক মৃত্তিকাকে পাঁচ টি ভাগে ভাগ করা যায়।
খাদার মৃত্তিকা: নদীর প্লাবন ভুমিতে নবীন পলি দ্বারা খাদার মৃত্তিকা গঠিত হয়। খাদার মৃত্তিকায় বালির ভাগ বেশি থাকে। খাদার মৃত্তিকা প্রতি বছর পলি আচ্ছাদিত হয় বলে এর উর্বরতা ভাঙ্গর মৃত্তিকা থেকে বেশি। সাধারণত গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও অন্যান্য নদী তীরবর্তী অঞ্চলে খাদার মৃত্তিকা দেখা যায়।
ভাঙ্গর মৃত্তিকা: নদী-দূরবর্তী উচ্চভূমিতে প্রাচীন পলি দ্বারা ভাঙ্গর মৃত্তিকা গঠিত হয়। ভাঙ্গর মৃত্তিকায় কাদার ভাগ বেশি। ভাঙ্গর মৃত্তিকা প্রতি বছর পলি আচ্ছাদিত হয় না বলে এর উর্বরতা খাদার মৃত্তিকার থেকে কম। পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় অঞ্চলে ভাঙ্গর মৃত্তিকা পরিলক্ষিত হয়।
- খাদার মৃত্তিকা।
- ভাঙ্গর মৃত্তিকা।
- ভাবর মৃত্তিকা।
- ধাঙ্কার মৃত্তিকা।
- কঙ্কর মৃত্তিকা।
খাদার মৃত্তিকা: নদীর প্লাবন ভুমিতে নবীন পলি দ্বারা খাদার মৃত্তিকা গঠিত হয়। খাদার মৃত্তিকায় বালির ভাগ বেশি থাকে। খাদার মৃত্তিকা প্রতি বছর পলি আচ্ছাদিত হয় বলে এর উর্বরতা ভাঙ্গর মৃত্তিকা থেকে বেশি। সাধারণত গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও অন্যান্য নদী তীরবর্তী অঞ্চলে খাদার মৃত্তিকা দেখা যায়।
ভাঙ্গর মৃত্তিকা: নদী-দূরবর্তী উচ্চভূমিতে প্রাচীন পলি দ্বারা ভাঙ্গর মৃত্তিকা গঠিত হয়। ভাঙ্গর মৃত্তিকায় কাদার ভাগ বেশি। ভাঙ্গর মৃত্তিকা প্রতি বছর পলি আচ্ছাদিত হয় না বলে এর উর্বরতা খাদার মৃত্তিকার থেকে কম। পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় অঞ্চলে ভাঙ্গর মৃত্তিকা পরিলক্ষিত হয়।
ভাবর মৃত্তিকা: পর্বতের পাদদেশীয় অঞ্চলের নুড়ি, কাঁকর মিশ্রিত অনুর্বর মৃত্তিকাকে ভাবর বলে।
ধাঙ্কার মৃত্তিকা: উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের জলাভূমির মৃত্তিকাকে ধাঙ্কার বলে।
কঙ্কর মৃত্তিকা: ভাঙ্গড় অঞ্চলের দানা যুক্ত মৃত্তিকাকে কঙ্কর বলে।
0 মন্তব্যসমূহ