ভারতের সংবিধানের পৌর অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার সমূহ: (Civil and Political Rights).


অধিকার হল যথাসম্ভব সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপযোগী সর্বাধিক পরিমাণ সেইসব বাহ্যিক সুযোগসুবিধা, যেগুলি রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয়।


অধিকারকে সাধারণভাবে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
  • নৈতিক অধিকার: সামাজিক ন্যায়নীতিবোধের ওপর ভিত্তি করে যেসব অধিকার গড়ে উঠেছে, সেগুলিকে নৈতিক অধিকার।
  • আইনগত অধিকার: যেসব অধিকার আইন কর্তৃক স্বীকৃত ও সমর্থিত হয়, সেগুলিকে আইনগত অধিকার বলা হয়।

আইনগত অধিকারসমূহকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা হয়:
  1. পৌর অধিকার।
  2. সামাজিক অধিকার।
  3. রাজনৈতিক অধিকার।
  4. অর্থনৈতিক অধিকার।

নিম্নে পৌর অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার গুলি আলোচনা করছি;
পৌর অধিকারসমূহ (Civil Rights):
যেসব সুযোগসুবিধা ছাড়া মানুষ সভা ও সামাজিক জীবনযাপন করতে পারে না এবং যে-সুযোগের অভাবে ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশসাধন ব্যাহত হয়, সেইসব সুযোগসুবিধাকে পৌর অধিকার বলা হয়।

জীবনের অধিকার:
জীবনের অধিকার বলতে আত্মরক্ষার অধিকার এবং আত্মরক্ষার প্রয়োজনে আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের অধিকারকেও বোঝায়।

চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার:
চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার বলতে বাক্‌স্বাধীনতা ও মুদ্রাযন্ত্রের স্বাধীনতাকে বোঝায়। এরূপ স্বাধীনতা হল গণতান্ত্রিক সরকারের মূলভিত্তি। এই অধিকার সরকারকে স্বৈরাচারী হতে বাধা দেয়।

ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার:
স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করার মতো স্বাধীনভাবে চলাফেরা এবং সংঘ বা সমিতি গঠন করার অধিকার মানুষের ব্যক্তিসত্তা বিকাশের ক্ষেত্রে একান্ত প্রয়োজনীয়। কোনো ব্যক্তিকে বিনা বিচারে আটক করা বা ইচ্ছামতো গ্রেপ্তার করা প্রভৃতি এই অধিকারের বিরোধী।

সম্পত্তির অধিকার:
সম্পত্তির অধিকার বলতে বোঝায় ব্যক্তির সম্পত্তি অর্জন ও রক্ষা এবং সম্পত্তি ক্রয়বিক্রয় ও ভোগ করার অধিকার। সম্পত্তির অধিকার থাকা উচিত কি না, তা নিয়ে সমাজতন্ত্রবাদীদের সঙ্গে ধনতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসীদের যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে।

ধর্মের অধিকার:
স্বাধীনভাবে ধর্মাচরণ ও ধর্মপ্রচার করার অধিকার মানুষের একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু আমার ধর্মাচরণ ও ধর্মপ্রচারের অধিকার আছে বলে অন্য ধর্মে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের ওপর অত্যাচার করার কোনো অধিকার আমার নেই। তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনো ব্যক্তি যাতে অন্য ধর্মে হস্তক্ষেপ না করে স্বাধীনভাবে ধর্মাচরণ ও ধর্মপ্রচার করতে পারে, সেদিকে রাষ্ট্র সদাসতর্ক দৃষ্টি রাখে।

শিক্ষার অধিকার:
সভ্য সমাজ গঠনের কাজে শিক্ষার ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা ছাড়া মানুষ কখনই আত্মসচেতন ও সমাজসচেতন হয়ে উঠতে পারে না। তাই শিক্ষার অধিকার স্বীকার ক'রে নেওয়া প্রতিটি রাষ্ট্রের কর্তব্য।

সাম্যের অধিকার:
আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান এবং আইন কর্তৃক সমানভাবে সংরক্ষিত হওয়ার অধিকারকে সাম্যের অধিকার বলে।

রাজনৈতিক অধিকারসমূহ (Political Rights):
রাজনৈতিক অধিকার বলতে রাষ্ট্রীয় কার্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণকে বোঝায়।  বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধিকারগুলি হল :
ভোটদানের অধিকার:
রাজনৈতিক অধিকারগুলির মধ্যে ভোটদানের অধিকার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারই প্রকৃত গণতন্ত্রের ভিত্তি।

নির্বাচিত হওয়ার অধিকার:
যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিটি নাগরিকের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার অধিকার সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বীকৃতিলাভ করেছে।

সরকারি চাকুরির অধিকার:
উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিটি নাগরিক সরকারি কার্যে নিযুক্ত হওয়ার অধিকারী। সরকারি চাকুরি প্রদানের ক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম, বর্ণ প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র কোনো যোগ্য নাগরিককে সরকারি কার্যে নিযুক্ত হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না।

আবেদন করার অধিকার:
নিজেদের অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নাগরিকরা তার যথোচিত প্রতিবিধান দাবি করতে পারে। এই অধিকার নাগরিকদের অন্যতম মৌলিক অধিকার।

সমালোচনার অধিকার:
সরকারের কোনো কাজের ফলে নাগরিক-স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হলে বা ক্ষুণ্ণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে নাগরিকরা সেই কার্যের সমালোচনা করতে পারে। 

0 মন্তব্যসমূহ