চীনের উপর আরোপিত বিভিন্ন অসম চুক্তি:


উনিশ শতকের চারের দশক থেকে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ওলন্দাজ, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি শক্তিগুলি তাদের সামরিক শক্তি দ্বারা চীনকে বিভিন্ন যুদ্ধে পরাজিত করে। ফলে চীনে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। যার পরিণতিতে চীনের উপর তারা অন্যায় ভাবে বিভিন্ন ধরনের চুক্তি চাপিয়ে দেয়। যাকে 'অসম চুক্তি' বা 'বৈষম্যমূলক চুক্তি' বলে।


চীনের উপর আরোপিত অসম চুক্তির বৈশিষ্ট্য:
  • অসম চুক্তি গুলি চীনের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এগুলি ছিল একতরফা।
  • এই চুক্তির দ্বারা বিদেশি শক্তি গুলি চীনে নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে।
  • এই চুক্তিতে প্রকৃতপক্ষে চীনের সার্বভৌমত্বে আঘাত করে।

চীনের উপর আরোপিত অসম চুক্তিগুলি হল:

নানকিং এর সন্ধি (চুক্তি):
২৯ শে আগস্ট ১৮৪২ প্রথম আফিমের যুদ্ধে চীন পরাজিত হলে ব্রিটিশরা চীনের সাথে এই চুক্তি করে। পরাজিত হবার কারণে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও চীনে চুক্তি করতে বাধ্য হয়।

নানকিং এর চুক্তির শর্তাবলী:
  • এই চুক্তির দ্বারা ক্যান্টন, সাংহাই, অ্যায়ম, ফুচাও ও নিংগপো এই পাঁচটি বন্দর ইউরোপীয়দের বাণিজ্যের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয় যা 'চুক্তি বন্দর' নামে পরিচিত। 
  • হংকং চিরদিনের জন্য ব্রিটিশদের দিয়ে দিতে বাধ্য হয়।

বগের চুক্তি:
নানকিং এর চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কিছুকাল পরেই ইংরেজ ও চীনের মধ্যে ১৮৪৩ সালে বগের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী চীনের জনগণ ও শাসনব্যবস্থা ব্রিটিশ সরকারের হাতে চলে আসে।

ওয়াংশিয়া চুক্তি:
১৮৪৪ সালের ৩রা জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের ওয়াংসিয়া চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী আমেরিকাও ইংল্যান্ডের মতো সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। বিভিন্ন শুল্ক চাপানোর পূর্বে আমেরিকার পরামর্শ নিতে হবে।

হোয়ামপোয়ার চুক্তি:
১৮৪৪ সালে ফ্রান্স চীনের সঙ্গে হোয়ামপোয়ার অসম চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি অনুযায়ী ফ্রান্স চীনে অতিরিক্ত ক্ষমতা লাভ করবে। ফরাসি ব্যবসায়ীদের জন্য পাঁচটি বন্দর খুলে দিতে হবে।

সিমনোসেকির সন্ধি:
চিনের কোরিয়ার ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে চিন-জাপান যুদ্ধ (১৮৯৪-৯৫ খ্রি.) শুরু হয়। এই যুদ্ধে হেরে চিনের ওপর জাপান শিমােনােসেকির সন্ধি (১৮৯৫ খ্রি.) চাপিয়ে দেয়। এর ফলে কোরিয়াকে চিন স্বাধীনতা দেয় চিনের কাছ থেকে জাপান পেস্কাডােরেস, তাইওয়ান, লিয়াও টুং উপদ্বীপ ও পাের্ট আর্থার লাভ করে।জাপানকে চিন ২৩০ মিলিয়ন কিউপিং টেল ক্ষতিপূরণ দেয়। চিন তার বেশ কয়েকটি বন্দর জাপানের জন্য খুলে দেয়।

অন্যান্য চুক্তি:
এই চুক্তিগুলি ছাড়াও বিভিন্ন পাশ্চাত্য শক্তি চীনের উপর আরো কতকগুলি অসম চুক্তি চাপিয়ে দেয়।
যেমন; আইগুনের সন্ধি, তিয়েনসিয়েন চুক্তি, পিকিং এর সন্ধি, বক্সার প্রটোকল প্রভৃতি। এই সকল চুক্তির দ্বারা চীনের সম্পদ লুঠ করে বিদেশিরা এবং চীনা ভূখন্ডে বিদেশিদের আধিপত্য বাড়ে। 

0 মন্তব্যসমূহ