মধ্যযুগে ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথম নারী শাসক হিসেবে সুলতান ইলতুৎমিসের কন্যা সুলতান রাজিয়া ছিলেন একজন চিরস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। দাস বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান ইলতুৎমিস মৃত্যুর পূর্বে তাঁর কন্যা রাজিয়াকে সুলতান হিসাবে মনোনীত করেন। কিন্তু ইলতুৎমিসের মৃত্যুর দিল্লির গোঁড়া উলেমা ও আমির-ওমরাহরা তার পুত্র রুকনউদ্দিন ফিরোজকে দিল্লির সিংহাসনে বসান।
সুলতান রাজিয়ার সিংহাসন আরোহণ:
ইলতুৎমিস তাঁর পুত্রদের রাজ্যশাসনে যোগ্যতা ও দক্ষতার অভাব বিবেচনা করে মৃত্যুর পূর্বে কন্যা রাজিয়াকে পরবর্তী উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। কিন্তু ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর রক্ষণশীল অভিজাতরা একজন নারীকে শাসক হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করে এবং রাজিয়ার পরিবর্তে তারা ইলতুৎমিসের জ্যেষ্ঠপুত্র রুকুনউদ্দিন ফিরোজকে সিংহাসনে বসান, যিনি ছিলেন একজন দুর্বল ও অযোগ্য শাসক। এইরূপ পরিস্থিতিতে এক প্রাসাদ বিপ্লবের মাধ্যমে রাজিয়া ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন।
প্রশাসন পরিচালনায় রাজিয়ার অবদান:
সিংহাসন লাভের পর থেকেই রাজিয়া প্রত্যক্ষ সংঘর্ষের পরিবর্তে কূটনৈতিক দক্ষতার মাধ্যমে বিরোধী জোটে ভাঙন ধরান। প্রথমেই তিনি চল্লিশ চক্রের ক্ষমতা হ্রাসের জন্য অ-তুর্কিদের ও নিজের অনুগত ব্যক্তিদের প্রশাসনের উচ্চপদে নিয়োগ করেন। এর পাশাপাশি অভিজাতদের মধ্যে ভাঙন ধরিয়ে কুতুবউদ্দিন হাসান ঘুরিকে প্রধান সেনাপতি, মুহজাবউদ্দিনকে উজির এবং মালিক কবির খানকে লাহোরের ইক্তাদার পদে নিয়োগ করেন।
সুলতান রাজিয়ার প্রগতিশীল পদক্ষেপ গ্রহণ:
সুলতান রাজিয়া একাধিক প্রগতিশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। যথা— তিনি পুরুষের পোশাক ও শিরস্ত্রাণ পরিধান করে দরবারে আসতেন। রাজনৈতিক কার্য পরিচালনার সুবিধার্থে রাজিয়া পর্দাপ্রথার অবসান করেন। এমনকি নিজ মুদ্রায় সুলতানা-র পরিবর্তে তিনি নিজেকে সুলতান হিসেবে পরিচয় দিতে থাকেন।
রাজিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং পরিণতি:
সুলতান রাজিয়ার প্রগতিশীল পদক্ষেপ গ্রহণ:
সুলতান রাজিয়া একাধিক প্রগতিশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। যথা— তিনি পুরুষের পোশাক ও শিরস্ত্রাণ পরিধান করে দরবারে আসতেন। রাজনৈতিক কার্য পরিচালনার সুবিধার্থে রাজিয়া পর্দাপ্রথার অবসান করেন। এমনকি নিজ মুদ্রায় সুলতানা-র পরিবর্তে তিনি নিজেকে সুলতান হিসেবে পরিচয় দিতে থাকেন।
রাজিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং পরিণতি:
সুলতান রাজিয়ার বিভিন্ন প্রগতিশীল পদক্ষেপ দিল্লির অভিজাত শ্রেণি, উলেমাদের বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। এ ছাড়া রাজিয়া কর্তৃক জনৈক হাবসি ক্রীতদাস জামালউদ্দিন ইয়াকুৎ-কে আস্তাবলের উচ্চপদ দান এবং তাঁর পরপর দুটি ব্যর্থ সামরিক অভিযান রাজিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আরও ঘনীভূত করে তোলে। এই পরিস্থিতিতে রাজিয়ার অন্যতম দুই বিশ্বস্ত আমির আলতুনিয়া ও কবির খান রাজিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। আলতুনিয়া রাজিয়ার বাহিনীকে পরাস্ত করেন। এই যুদ্ধে সেনাপতি ইয়াকুৎ খাঁ নিহত হন এবং রাজিয়াকে বন্দি করে ভাতিণ্ডা দুর্গে অন্তরিন করে রাখা হয়।
রাজিয়া বন্দি হলে বিদ্রোহীদের নেতা আইতিগিন ইলতুৎমিসের তৃতীয় পুত্র বাহরম শাহকে সিংহাসনে বসিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। উক্ত পরিস্থিতিতে রাজিয়া আলতুনিয়াকে বিবাহ করে দিল্লি দখলের চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। শেষপর্যন্ত ১২৪০ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে কাইথাল নামক স্থানে রাজিয়া গুপ্ত ঘাতকের হাতে নিহত হন।
রাজিয়া বন্দি হলে বিদ্রোহীদের নেতা আইতিগিন ইলতুৎমিসের তৃতীয় পুত্র বাহরম শাহকে সিংহাসনে বসিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। উক্ত পরিস্থিতিতে রাজিয়া আলতুনিয়াকে বিবাহ করে দিল্লি দখলের চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। শেষপর্যন্ত ১২৪০ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে কাইথাল নামক স্থানে রাজিয়া গুপ্ত ঘাতকের হাতে নিহত হন।
0 মন্তব্যসমূহ