'রাজপুত্র' শব্দটির অপভ্রংশ রূপ হল 'রাজপুত'। ৭১২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১১৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে ভারতের ইতিহাসে রাজপুত যুগ বলে অভিহিত করা হয়। এই সময়ের মধ্যে উত্তর ভারতে বিভিন্ন রাজপুত রাজবংশের উত্থান ঘটে। রাজপুত জাতির উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন পণ্ডিত ও ইতিহাসবিদ বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করেছেন।
রাজপুতদের দাবি: রাজপুতরা দাবী করেন যে, তাঁরা বৈদিক যুগের উচ্চবংশীয় ক্ষত্রিয়দের বংশধর। হর্ষবধনের সভাকবি বান ভট্টের মতে, রাজপুতরা ছিলেন সূর্য বা চন্দ্রের বংশ জাত।
চাঁদ বরদাই এর অগ্নিকুল তত্ত্ব: কবি চাঁদ বরদাই তাঁর বিখ্যাত কাব্য ‘পৃথ্বীরাজ রাসো’ গ্রন্থে বলেছেন যে বলিষ্ঠ মুনি মাউন্ট আবু পাহাড়ে ২৪ দিন ধরে যজ্ঞ করে বীরের প্রাথনা করেছিলেন। বলিষ্ঠ মুনির এই যজ্ঞের আগুন থেকেই রাজপুত জাতির উৎপত্তি হয়েছে বলে চাঁদ বরদাই উল্লেখ করেছেন।
কর্নেল টডের মিশ্র জাতি তত্ব: ব্রিটিশ ঐতিহাসিক কর্নেল টর্ড তাঁর ‘Annals and Antiquities of Rajasthan’ গ্রন্থে বলেছেন যে, শক, হুন, কুষাণ, গুজর প্রভৃতি বৈদেশিক জাতি ভারতে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, এদের সন্তান সন্ততিদের 'রাজপুত' বলা হয়।
গৌরীশঙ্কর ওঝার বৈদেশিক জাতি তত্ব: ঐতিহাসিক গৌরীশঙ্কর হীরাচাঁদ ওঝা তাঁর গ্রন্থে বলেছেন যে, রাজপুতরা কোনো বৈদেশিক জাতির অংশ নয়। রাজপুতরা হল খাঁটি আর্য জাতির সন্তান।
ভিনসেন্ট স্মিথে মিশ্র জাতি তত্ব: ড: ভিনসেন্ট স্মিথের মতে, রাজপুত গণ একটি মিশ্র জাতি। তিনি রাজপুতদের আর্য জাতির বংশধর বলে মনে করেন না। কিন্তু সংখ্যক রাজপুত বিদেশী হুন, শক ও কুষানদের বংশধর আর ক্ষত্রিয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
ভারতের জাতীয় জীবনে রাজপুত জাতির অবদান:
ভারতের জাতীয় জীবনে রাজপুত জাতির অবদান অনস্বীকার্য, যথা—
স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামী মনোভাব: যোদ্ধা জাতি হিসেবে রাজপুতদের দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম, শৌর্যবীর্য, সংগ্রামী মনোভাব প্রভৃতি ভারত ইতিহাসে তাদের চিরস্মরণীয় করে রেখেছে। এই কারণে ভারতব্যাপী সাম্রাজ্যবিস্তারে উৎসাহী শাসকেরা বারংবার রাজপুতদের সাহায্য গ্রহণে উদ্যত হয়েছিলেন।
দৃঢ় মানসিকতা: রাজপুত জাতির মানসিক দৃঢ়তা তাদের ভারত ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। নারীর মর্যাদারক্ষা, শরণাগতকে আশ্রয়দান, শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি সহৃদয় ব্যবহার তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে। শৌর্যবীর্যে কেবলমাত্র পুরুষরাই নয়, রাজপুত রমণীদের সংগ্রামী মনোভাবও ইতিহাসে তাদের অমর করে রেখেছে।
ধর্ম ও সাংস্কৃতিক চেতনা: ভারতের ধর্ম ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে রাজপুতদের অবদান অপরিসীম। রাজপুত শাসকরা শিল্প-সাহিত্যের উৎসাহী পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
0 মন্তব্যসমূহ