ভারতবর্ষে যখন পরাধীনতার অন্ধকারে নিমজ্জিত, তখন যারা জাতীয়তাবাদের প্রচার করে দেশবাসীকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের প্রধান শীর্ষ স্বামী বিবেকানন্দ তাদের মধ্যে অন্যতম। স্বামী বিবেকানন্দ নির্যাতিত ভারতবাসীকে মানবপ্রেম ও দেশপ্রেমের মন্ত্রে দীক্ষিত করে নতুন শক্তিতে জাগিয়ে তোলেন।
জাতীয়তাবাদের বিকাশে বিবেকানন্দের অবদানঃ
স্বদেশের প্রতি আস্থা: বিবেকানন্দ তাঁর 'বর্তমান ভারত' গ্রন্থে পাশ্চাত্য সভা ও সংস্কৃতি অন্ধ অনুকরণে নিন্দা করেন এবং ভারতবাসীকে নিজের সভ্যতার সংস্কৃতির প্রতি আস্থাবান হতে বলেন।
আত্মবিশ্বাস: স্বামী বিবেকানন্দ ভারতবাসীকে পরাধীনতার গ্লানি দূর করে আত্মবিশ্বাসী হতে বলেন। তিনি "বর্তমান ভারত" গ্রন্থী দেশবাসীকে বলেন যে, ভারতবর্ষে আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমার ঈশ্বর, ভারতের সমাজ আমার শিশুশয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার বার্ধক্যের বারানসি ; বল ভাই - ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ।
শিকাগো বক্তৃতা: বিবেকানন্দ ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার শিকাগো শহরে আয়োজিত বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে উপস্থিত থেকে সেখানে ভারতের অদ্বৈত বেদান্তের কথা বিশ্ববাসীকে শোনান এবং বিশ্ববাসী ভারতের উদার ধর্মীয় ঐতিহ্যের কথা শুনে মুগ্ধ হয়। এতে ভারতীয় ঐতিহ্যের মর্যাদা বাড়ে।
ভারতমাতার বন্দনা: বিবেকানন্দ জাতিকে বলেন যে, মানুষ জন্ম থেকেই মায়ের জন্য বলি প্রদত্ত। এখানে মা বলতে তিনি দেশমাতাকে বুঝিয়েছেন। তিনি ভারতবাসীকে বলেন যে, অন্যান্য দেবদেবী বাদ দিয়ে আগামী ৫০ বছর ভারত মাথায় যেন সবার একমাত্র আরাধ্যদেবী হন।
মানবধর্ম: বিবেকানন্দ জাতি গঠনের উদ্দেশ্যে মানব ধর্মের কথা বলেন। তার ধর্ম হলো " মানুষ তৈরির ধর্ম "। এই মানুষ তৈরির উদ্দেশ্যেই তিনি ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন।
নবভারতের স্বপ্ন: বিবেকানন্দ ভারতের সাধারণ শ্রমজীবী ও তথাকথিত নীচজাতির উন্নতির মাধ্যমে এক নতুন ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তাই তিনি বলেন, "নতুন ভারত বেরুক, বেরুক লাঙ্গল ধরে, চাষার কুটির ভেদ করে, জেলে মালামু, জেলে-মালা-মুচি-মেথরের ঝুপড়ির মধ্যে হতে, বেরুক মুদির দোকান থেকে, ভুলাওয়ালার উনুনের পাশ থেকে। "
ঐক্যবদ্ধ ভারতের স্বপ্ন: বিবেকানন্দ ভারতবাসীকে জাতিভেদ ত্যাগ করে ঐক্যবদ্ধ দেশের উন্নতির জন্য কাজ করতে বলেন। তিনি বলেন যে, অতীতের বিভিন্ন যুগে ভারতে শূদ্ররা নিপীড়িত হয়েছে। কালের চক্রেই একদিন শূদ্ররা ভারতের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে। তাই বিভেদ নয়, একতাই ভারতের উন্নতির একমাত্র পথ।
উপসংহার: ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশে স্বামী বিবেকানন্দের অসামান্য ভূমিকার কথা স্মরণ করে ঐতিহাসিক আর জি প্রধান তাঁকে ' ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জনক' বলে অভিহিত করেছেন। বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ বলেছেন, 'বিবেকানন্দই আমাদের জাতীয় জীবন গঠন কর্তা'।
স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে আরো কিছু জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন;
0 মন্তব্যসমূহ