দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি:


দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার অর্থ হল দুটি পরিষদ বা কক্ষ নিয়ে গঠিত আইনসভা। সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা চালু হয় বলেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে 'Mother of the Parliament' (পৃথিবীর আইনসভার জননী) বলে আখ্যায়িত করা হয়। আইনসভা এক কক্ষ বিশিষ্ট হবে না দুকক্ষ বিশিষ্ট হবে তা নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।

সেই সব মতবিরোধ গুলি নিম্ন যুক্তি সহকারে আলোচনা করছি।

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যুক্তি: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যুক্তিগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল—

সুচিন্তিত আইন প্রণয়ন: দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা সুচিন্তিতভাবে আইন প্রণীত হয়। আইনসভা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট হওয়ায় প্রতিটি বিল কে দুটি কক্ষে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার বিবেচনা করার সুযোগ পাওয়া যায়। এতে বিলের ত্রুটি
বিচ্যুতি ধরা পড়ে।

স্বৈরাচারিতা রোধ: দ্বিতীয় কক্ষের উপস্থিতি প্রথম কক্ষের স্বৈরাচার প্রতিরোধ করে এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা করে। দ্বিতীয় কক্ষ সরকারের অত্যাচার থেকে জনগণকে রক্ষা করে। কারণ একটি কক্ষের হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন হলে তা স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে।

জ্ঞানীগুণীদের প্রতিনিধিত্ব: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় দেশের জ্ঞানীগুণী মানুষদের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় কক্ষ রাজ্যসভায় বহুদিক থেকে প্রতিভাবান (সাহিত্য, ক্রীড়া, সংগীত, বিজ্ঞান, সমাজসেবা প্রভৃতি ক্ষেত্রের) পণ্ডিত ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্ব দেখা যায়।

সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষা: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় পরোক্ষ নির্বাচন ও মনোনয়নের
ব্যবস্থা থাকায় সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষায় তাদের মধ্য থেকে যথাযথ প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করা হয়।

রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় আইন প্রণয়নের সময় যে তর্কবিতর্ক হয়, তা গণমাধ্যম মারফত প্রচারিত হওয়ায় জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা ও শিক্ষার প্রসার ঘটে।

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিপক্ষে যুক্তি: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিপক্ষে যুক্তিগুলি হল—

অগণতান্ত্রিক: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সদস্যরা সকলে পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির দ্বারা নির্বাচিত বা মনোনীত হন। এই কারণে অনেকে মনে করেন, এই পদ্ধতি থাকার ফলে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি লঙ্ঘিত হয়।

প্রগতিবিরোধী: অনেকক্ষেত্রে কেবলমাত্র বিরোধিতার কারণে জনকল্যাণমূলক ও প্রগতিশীল আইন প্রণয়নে দ্বিতীয় কক্ষ অহেতুক জটিলতা এবং বাধার সৃষ্টি করে, যা প্রগতিবিরোধী।

সময়ের অপচয় ও ব্যয়বহুল: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা থাকলে তার জন্য রাষ্ট্রের কোশাগার থেকে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। তা ছাড়া উচ্চকক্ষ কোনো আইনকে দীর্ঘকাল আটকে রাখলেও সময়ের অপচয় হয়।

জরুরি সময়ে আইন প্রণয়নে অহেতুক বিলম্ব ঘটে: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় আইন প্রণয়নে দুটি কক্ষের ভূমিকা থাকায় জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত আইন প্রণয়ন করা সম্ভব হয় না।

    পরিশেষে বলা যায়, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার উপযোগিতা নিয়ে বহু আলোচনা সমালোচনা হলেও, বহু দেশেই এইরূপ
আইনসভাকে উচ্ছেদ করা হয়নি, বড়োজোড় তা সংস্কার করা হয়েছে।

0 মন্তব্যসমূহ