বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জাতীয়তাবাদ: (Bankim Chandra Chatterjee's Nationalism).


যে কোনো দেশে জাতীয়তাবাদের উন্মেষের মূলে মনস্তাত্ত্বিক কারণটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতে মনস্তাত্ত্বিক জাগরণের কাজে বিশিষ্ট ভূমিকা নিয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্ৰ চট্টোপাধ্যায়। ভারতে জাতীয়তাবাদের উন্মেষে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের (১৮৩৮-৯৪ খ্রি.) অবদান অপরিসীম। তিনি ছিলেন ঊনবিংশ শতকের অগ্রণী ঔপন্যাসিক ও প্রবন্ধকার। বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা পাঠ করে ভারতীয়রা জাতীয়তাবাদ ও দেশাত্মবোধে অনুপ্রাণিত হন।


বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তাবাদী উপন্যাস রচনা:
বঙ্কিমচন্দ্রের অধিকাংশ উপন্যাসের বিষয়বস্তু ছিল স্বদেশ ও দেশপ্ৰেম৷

  •  ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্রের 'আনন্দমঠ ‘উপন্যাস প্রকাশিত হয়। এখানে তিনি ইংরেজ বিরোধী সন্ন্যাসী বিদ্রোহের ঘটনাকে উপলক্ষ্য করে স্বদেশ চেতনার জাগরণ ঘটান।
  •  'দেবী চৌধুরাণী' উপন্যাসেও তিনি ইংরেজের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের জাত্যভিমানকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। তাঁর অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে 'সীতারাম', ' রাজসিংহ', 'দুর্গেশনন্দিনী' প্রভৃতি স্বদেশপ্রেমের চেতনায় সমৃদ্ধ ছিল।

বঙ্কিমচন্দ্রের সংগীত রচনা:
বঙ্কিমচন্দ্র বন্দে মাতরম নামক সংগীত রচনা করে দেশবাসীকে স্বদেশ চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন। পরে এটিকে তিনি 'আনন্দমঠ' উপন্যাসের অন্তর্ভুক্ত করেন। এই সংগীতটি জাতীয়তাবাদের ‘যন্ত্র'রূপে সমাদৃত হয়।

বঙ্কিমচন্দ্রের রম্য রচনা ও প্রবন্ধ প্রকাশ:
একাধিক রম্য রচনা ও প্রবন্ধ প্রকাশ করে তিনি সমাজে প্রচলিত নানা কুসংস্কার এবং বিদেশির চাটুকারিতার বিরুদ্ধে জনমত গঠন করেন।

  •  বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর রচিত প্রবন্ধ কমলাকান্তের দপ্তর'-এ অন্ধ ইংরেজ প্রীতির ওপর কশাঘাত করেন।
  •  ভারত কলঙ্ক, ভারতের স্বাধীনতা এবং পরাধীনতা, বাঙ্গালীর বাহুবল প্রভৃতি প্রবন্ধে তিনি দেশবাসীকে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হতে আহ্বান জানান৷
  •  লোক রহস্য প্রবন্ধে তিনি উদারপন্থী রাজনীতিকদের আবেদন নিবেদন নীতি বর্জন করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার আহ্বান জানান।

0 মন্তব্যসমূহ