মধ্যযুগে বিশেষ করে দশম ও একাদশ শতকে নগরসভ্যতা ও বাণিজ্য বিকাশের সূত্র ধরে বহু বণিক ও কারিগর নগরগুলিতে বসবাস করতে শুরু করে। এরা নিজেদের শ্রেণিস্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে সংঘবদ্ধ হলে গড়ে ওঠে বণিক ও কারিগরদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বা গিল্ড।
মধ্যযুগে ইউরোপে গিল্ড প্রতিষ্ঠার যে সব কারণগুলি লক্ষ্য করা যায় তা নিম্নে আলোচনা করছি:-
শ্রেণিস্বার্থ রক্ষা করা: মধ্যযুগে ইউরোপের নগরকেন্দ্রিক সভ্যতায় বণিক ও কারিগররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করলেও সমাজে তাদের কোনো সম্মান ছিল না। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের শ্রেণিস্বার্থকে সুরক্ষিত করে রাখার উদ্দেশ্যে বণিক ও কারিগররা নিজেদের সংগঠন গড়ে তুলেছিল।
বেআইনি কর আদায় বন্ধ করা: মধ্যযুগের বিভিন্ন নগরগুলি সামন্তপ্রভুদের এলাকায় গড়ে ওঠায় সামন্তপ্রভুরা নগরের বণিক ও কারিগরদের থেকে বিভিন্ন ধরনের কর আদায় করত। এই অতিরিক্ত করের বোঝা বণিকদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। এই ধরনের অন্যায্য করের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উদ্দেশ্যে বণিক ও কারিগররা গিল্ড গঠন করেছিল।
শিল্প ও বাণিজ্যের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি: মধ্যকালীন ইউরোপের নগরগুলিতে বণিক ও কারিগররা উপলব্ধি করেছিল যে, শিল্প ও বাণিজ্যের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে প্রশাসনের কাছে নিজেদের দাবি তুলে ধরতে হবে। তাদের এই মনোভাবই গিল্ড গঠনের প্রেক্ষাপট রচনা করতে সাহায্য করেছিল।
নিরাপত্তা বজায় রাখা: আলোচ্য পর্বে নগরগুলির বা বাণিজ্যপথের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না হওয়ার কারণে ব্যাবসাবাণিজ্য ছিল অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ। এইরূপ পরিস্থিতিতে বণিক ও কারিগররা নিজেদের নিরাপত্তা সুদৃঢ় করার জন্য গিল্ড গঠন করেছিল।
কাঁচামালের জোগান সুনিশ্চিত করা: মধ্যযুগীয় ইউরোপে কারিগররা কৃষিজাত কাঁচামাল ব্যবহার করে শিল্পজাত পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করত। সব কারিগর যাতে সমপরিমাণ কাঁচামাল পায় এবং কাঁচামালের জোগান সুনিশ্চিত করে পণ্য উৎপাদন করা যায় সেই উদ্দেশ্যে বণিক ও কারিগররা গিল্ড গঠন করেছিল।
পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখা: মধ্যযুগীয় ইউরোপে অনেকক্ষেত্রেই অসাধু ব্যবসায়ী বা কারিগররা অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন ও তা বাজারজাত করত। ফলে ক্রেতারা বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হত। এই সকল অসুবিধা দূর করে পণ্যের সঠিক গুণগত মান বজায় রাখার উদ্দেশ্যে গিল্ড গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ