সাধারণ সভার গঠন ও কার্যাবলী: (The General Assembly).


সাধারণ সভা হল ‘বিশ্বের বিরাট নাগরিক জনসভা'। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সব সদস্য রাষ্ট্রকে নিয়েই সাধারণ সভা গঠিত হয়। বর্তমানে সাধারণ সভার মোট সদস্যসংখ্যা হল ১৯৩। প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র সাধারণ সভায় অনধিক ৫ জন প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারে। কিন্তু একটি সদস্য রাষ্ট্র একাধিক ভোট প্রদান করতে পারে না। এইভাবে ক্ষুদ্রবৃহৎ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সমতার নীতি অনুসরণ করা হয়। প্রতি বছর অধিবেশন শুরু হওয়ার পূর্বে সাধারণ সভা একজন সভাপতি (President) ও ২১ জন সহ-সভাপতি (Vice-President) -কে নির্বাচন করে। কার্য পরিচালনার ব্যাপারে সাধারণ সভাকে সাহায্য করার জন্য কতকগুলি কমিটি রয়েছে। কমিটিগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়, যথা—

(ক) মূল কমিটি (Main Committee).
(খ) অন্যান্য কমিটি (Other Committees).

সাধারণ সভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি:
সাধারণ সভার কার্যাবলিকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে:
আলোচনা ও সুপারিশ করার ক্ষমতা:
সাধারণ সভা সনদের অন্তর্ভুক্ত যে কোনো বিষয়ে আলোচনা করতে পারে। তবে কোনো রাষ্ট্রের ‘ঘরোয়া ব্যাপার' (domestic matter) -এ আলোচনা করার অধিকার সাধারণ সভার নেই। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করার সাধারণ নিয়মগুলি নিয়ে সাধারণ সভা আলোচনা করতে এবং সে বিষয়ে নিজের সুচিন্তিত অভিমত নিরাপত্তা পরিষদকে অথবা নিজ সদস্যদের জানাতে পারে। তা ছাড়া, জাতিপুঞ্জের সদস্য নয় এমন কোনো রাষ্ট্র যদি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো বিষয় সাধারণ সভার নিকট উপস্থাপন করে, তবে সে বিষয়েও সভা আলোচনা করতে এবং নিজের অভিমত জ্ঞাপন করতে পারে।
তবে সাধারণ সভার আলোচনা ও সুপারিশ করার ক্ষমতার ওপর দুটি বাধানিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এগুলি হল –
  • যদি কোনো একটি ব্যাপারে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সাধারণ সভা মনে করে, তবে সে বিষয়ে কোনো আলোচনা করার পূর্বে বা পরে অতি-অবশ্যই বিষয়টি নিরাপত্তা  পরিষদের কাছে প্রেরণ করতে হবে।
  • যেসব বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদ আলোচনা করছে, সেইসব বিষয়ে পরিষদের বিনা অনুরোধে সাধারণ সভা আলোচনা চালাতে বাসে সম্পর্কে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করতে পারে না।

আইন প্রণয়ন-সংক্রান্ত ক্ষমতা:
সাধারণ সভার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল আইন প্রণয়ন করা।
প্রধানত দুটি উদ্দেশে সাধারণ সভা তথ্য গ্রহণ ও অনুমোদন এবং সুপারিশ প্রদান করতে পারে, যথা-
  • রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উন্নতি বিধান ও উন্নততর আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়নে উৎসাহদান।
  • অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং জাতিধর্মবর্ণ ও স্ত্রীপুরুষ-নির্বিশেষে সকলকে মৌলিক স্বাধীনতা লাভে সহযোগিতা করা। তবে সাধারণ সভার কোনো সুপারিশ আইনের মতো কার্যকর নয়। তাই অনেকে সাধারণ সভার এই ক্ষমতাকে আইন প্রণয়ন-সংক্রান্ত ক্ষমতা না বলে 'আধা-আইন বিষয়ক ক্ষমতা' বলে বর্ণনা করে থাকেন। তথাপি একথা অনস্বীকার্য যে, সাধারণ সভার সুপারিশগুলি মোটামুটিভাবে ফলপ্রসূ হতে পারে। কারণ, এর পেছনে থাকে বিশ্বজনমতের অকুণ্ঠ সমর্থন।

রাজনৈতিক ক্ষমতা:
সনদ-স্রষ্টাগণ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব নিরাপত্তা পরিষদের হাতে অর্পণ করেছিলেন। কিন্তু এই দায়িত্ব সাধারণ সভার হাতেও কিছু পরিমাণে অর্পিত হয়েছে বলা যেতে পারে। সনদে বলা হয়েছে, যদি এমন কোনো বিবাদ বা পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যাতে করে যে-কোনো মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সংঘর্ষ দেখা দিতে পারে, তখন সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের যে-কোনো সদস্য-রাষ্ট্র সে বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদ কিংবা সাধারণ সভার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। তা ছাড়া, বৃহৎ শক্তিগুলির ‘ভিটো’ প্রয়োগের ফলে বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদ বিশ্বশান্তি রক্ষা করার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তাই শান্তিরক্ষার দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবে এসে পড়েছে সাধারণ সভার হাতে। বিশেষত, ১৯৫০ সালের ৩ রা নভেম্বর শান্তির জন্য সম্মিলিত হওয়ার প্রস্তাব’টি গৃহীত হওয়ার ফলে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব সাধারণ সভার ওপর ন্যস্ত হয়েছে। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে, ‘ভিটো’ প্রয়োগের ফলে নিরাপত্তা পরিষদ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় নিজ দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে সাধারণ সভা সেইসব দায়িত্ব পালন করবে। এইভাবে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মূল উদ্দেশ্যটির বাস্তব রূপায়ণের দায়িত্ব এসে পড়েছে সাধারণ সভার হাতে।

তত্ত্বাবধান-সংক্রান্ত ক্ষমতা:
অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ, অছি পরিষদ, কর্মদপ্তর, এমনকি নিরাপত্তা পরিষদকেও তাদের সম্পাদিত কার্যাবলির বিবরণ সাধারণ সভার নিকট পেশ করতে হয়। তবে নিরাপত্তা পরিষদের প্রদত্ত বিবরণের ওপর সাধারণ সভায় কোনোরকম বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় না বললেই চলে।

অর্থনৈতিক ক্ষমতা:
সাধারণ সভার হাতে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কোষাগারের দায়িত্ব থাকে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটির আয়ব্যয়ের হিসাব পরীক্ষা এবং ব্যয় অনুমোদন করা সাধারণ সভারই কর্তব্য। কোন্ সদস্য রাষ্ট্রকে কত পরিমাণ চাঁদা দিতে হবে, সাধারণ সভা তা নির্ধারণ করে দেয়। যদি কোনো সদস্য রাষ্ট্র তার দেয় অর্থ যথাসময়ে প্রদান না করে, তবে তাকে তিরস্কার করা থেকে শুরু করে তার ভোটাধিকার পর্যন্ত বাতিল করার ক্ষমতা সাধারণ সভার আছে।

নির্বাচন-সংক্রান্ত ক্ষমতা:
নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যদের নির্বাচন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সদস্যদের নির্বাচন এবং অছি পরিষদের কিছু সংখ্যক সদস্য নির্বাচন করার ক্ষমতা সাধারণ সভার আছে। তা ছাড়া, নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে সাধারণ সভা মহাসচিব (Secretary General), আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের বিচারপতি এবং জাতিপুঞ্জের নতুন সদস্যদের নির্বাচন করতে পারে।

সাংবিধানিক ক্ষমতা:
সনদ সংশোধনের ক্ষেত্রেও সাধারণ সভার ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সনদ সংশোধনের প্রস্তাবগুলি নিরাপত্তা পরিষদের সম্মতিক্রমে এবং সাধারণ সভার উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সম্মতি লাভ করলে কার্যকর হয়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ‘নিরাপত্তা পরিষদের সম্মতিক্রমে’ বলতে পরিষদের ৫ টি স্থায়ী সদস্য-সহ মোট সদস্য-রাষ্ট্রের অন্তত ৯ টির সম্মতি থাকাকে বোঝায়।

সাধারণ সভার ভোট-পদ্ধতি:
সাধারণ সভার ক্ষুদ্রবৃহৎ প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রই মাত্র একটি করে ভোটদানের অধিকারী। ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে’ সাধারণ সভায় উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ব্যবস্থাদি অনুমোদন, নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচন, সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নতুন সদস্য গ্রহণ প্রভৃতি ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের’ অন্তর্ভুক্ত। ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি’ ছাড়া ‘অন্যান্য বিষয়ে’ সাধারণ সভায় উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

     আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ সভার কার্যাবলির কোনো আইনগত মূল্য নেই বলে মনে হলেও তার গুরুত্ব কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। আইনসভার মতোই সাধারণ সভায় কোনো একটি বিষয়ে আলাপ-আলোচনা, বিতর্ক এবং ভোট গ্রহণ — সবই চলে। কিন্তু এত সব করেও সাধারণ সভা বাস্তবে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না, অর্থাৎ নিজ সিদ্ধান্তকে কার্যকর করার কোনো ক্ষমতা সাধারণ সভার নেই। তাই নিকোলাস মন্তব্য করেছেন যে, প্রচারের জন্যই সাধারণ সভার সৃষ্টি। ব্যক্তিগত মধ্যস্থতা ও আলাপ-আলোচনার মধ্যেই এর ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। রাজনীতি একে বাঁচিয়ে রেখেছে। পৃথিবীর সব আইনসভার মতোই একে কাজ করতে হয়, কিন্তু তাদের কোনোটির সঙ্গেই এর তুলনা করা চলে না। সাধারণ সভা একটি 'অদ্বিতীয়' প্রতিষ্ঠান।

1 মন্তব্যসমূহ

  1. This renowned on line casino and poker site is giving new players a welcome deposit bonus package deal of a 100 percent match for up to as} $3,000. If you want to play on-line on line casino video games and poker with the same operator, then you should to} check out at|try} Ignition Casino. A deposit bonus is a reward you obtain if you add funds to 온라인카지노 your account. You will need to|might need to} deposit sure amount|a specific amount|a certain quantity} and, probably, use a promo code to activate these offers. A playthrough requirement is a betting goal you need to|you must} hit before requesting a withdrawal. If the playthrough requirement is 10X, this implies want to|you should|you have to} guess 10X the worth of your bonus and/deposit amount.

    উত্তরমুছুন