পলাশীর যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধে ফলাফলের তুলনামূলক আলোচনা:


ভারতে ইংরেজদের আধিপত্য স্থাপনের ক্ষেত্রে যে দুটি যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, তার একটি ছিল পলাশীর যুদ্ধ। অপরটি ছিল বক্সারের যুদ্ধ।

ঐতিহাসিকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলে আসছে যে, পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের মধ্যে কোনটি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ?
ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্র বলেছেন, ভারতের ইতিহাসে বক্সারের যুদ্ধ ছিল সর্বাধিক যুগান্তকারী ও তাৎপর্যপূর্ণ।
তবে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেতে হলে দুটি যুদ্ধেরই ফলাফলের তুলনামূলক আলোচনা করা প্রয়োজন।

সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ভিত্তি সুদৃঢ়:
পলাশি যুদ্ধের দ্বারা ভারতে যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়, বক্সারের যুদ্ধের দ্বারা তার ভিত্তি আরও দৃঢ় হয়।

প্রকৃত যুদ্ধ:
পলাশির যুদ্ধজয়ে শক্তির চেয়ে কূটনীতি ও বিশ্বাসঘাতকতার ভূমিকা বেশি ছিল। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধ ছিল প্রকৃত ও চুড়ান্ত ফল - নির্ণয়কারী যুদ্ধ। ঐতিহাসিক স্মিথের মতে, পলাশির যুদ্ধ ছিল কয়েকটি কামানের লড়াই, বক্সার ছিল ইংরেজদের চূড়ান্ত বিজয়।

শাসনক্ষেত্রে আধিপত্য:
পলাশির যুদ্ধে জিতে বাংলায় ইংরেজ কোম্পানির জয়যাত্রার সূচনা হয়। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে শাসনক্ষেত্রে চূড়ান্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নবাব কোম্পানির বৃত্তিভোগী হাতের পুতুলে পরিনত হয়। র‍্যামসে মুরের মতে, বক্সার বাংলার ওপর কোম্পানির শাসনের শৃঙ্খল চূড়ান্তভাবে স্থাপন করে।

অর্থনৈতিক আধিপত্য:
পলাশির যুদ্ধে বিনাশুল্কে বাণিজ্যিক অধিকারের সফল প্রয়োগ ঘটায়। কিন্তু বক্সারের পরে লবণ ছাড়া সমস্ত পণ্যে এই অধিকার স্বীকৃত হয়। অন্যান্য ইউরোপীয় সহ দেশীয় বণিকদের বাণিজ্য ধ্বংস হতে থাকে।

সাম্রাজ্যের প্রসার:
পলাশির যুদ্ধে শুধু বাংলার নবাব পরাজিত হয়েছিলেন। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে বাংলার নবাবের সাথে অযোধ্যার নবাব ও দিল্লির বাদশাহও পরাজিত হন। ফলে সমগ্র উত্তর ভারতে ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

দেওয়ানি লাভ:
যুদ্ধের পর কোম্পানি দিল্লির বাদশাহ দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে দেওয়ানী লাভ করেন। ফলে বাংলা-বিহার উড়িষ্যার রাজস্ব আদায়ের অধিকার আইনগত বৈধতা পায়।

সুতরাং বক্সারের যুদ্ধ ছিল ভারত ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পলাশি যুদ্ধ যদিও নির্ণায়ক যুদ্ধ তথাপি কখনই বৃহৎ যুদ্ধরূপে বিবেচিত হতে পারে না। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধ ছিল ‘এক চূড়ান্ত যুদ্ধ’।

0 মন্তব্যসমূহ