সুদূর অতীত থেকে শুরু করে ইতিহাসের লিখিত উপাদানের প্রাপ্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত সময়কালকে ‘প্রাগৈতিহাসিক যুগ’ বলা হয়। পৃথিবীতে প্লেইস্টোসিন যুগের আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষদের প্রজাতির এবং শেষদিকে হোমো স্যাপিয়েন্স নামে আধুনিক মানুষের আবির্ভাব ঘটে। মানুষ প্রথম থেকে বিভিন্ন ধরনের পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করে খাদ্যের সংস্থান করত। তাই এই যুগকে প্রস্তর যুগ (Stone Age) বলা হয়। বিভিন্ন প্রত্নতত্ত্ববিদ পাথরে নির্মিত হাতিয়ারের ক্রমোন্নতি লক্ষ করে প্রস্তর যুগকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা—
- প্রাচীন প্রস্তর যুগ বা প্যালিওলিথিক।
- মধ্য প্রস্তর যুগ বা মেসোলিথিক।
- নব্য প্রস্তর যুগ বা নিওলিথিক।
নব্য প্রস্তর যুগের শেষে মানুষ ধাতুর ব্যবহার শুরু করে। তারা সর্বপ্রথম তামা এবং এর কিছুকাল পর ব্রোঞ্জ ধাতুর ব্যবহার শেখে। তাই নব্য প্রস্তর যুগের পরবর্তী সময়কাল তাম্র-প্রস্তর যুগ নামে পরিচিত।
উক্ত যুগগুলির মধ্যে একমাত্র প্রাচীন প্রস্তর যুগটিই প্লেইস্টোসিন যুগের অন্তর্গত। পরবর্তী যুগগুলি অর্থাৎ মধ্য প্রস্তর, নব্য প্রস্তর ও তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগ হোলোসিন যুগের অন্তর্গত।
প্রাচীন প্রস্তর যুগের সময়কাল:
প্রাচীন প্রস্তর যুগের শুরু হয় অন্তত ৫০ হাজার বছর আগে এবং শেষ হয় প্রায় ১৫,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। পিকিং মানব, জাভা মানব, আটলানথ্রোপাস মানব (আলজেরিয়া), ওলড়ভাই মানব (তাঞ্জানিয়া), নিয়ানডারথাল মানব-সহ বিভিন্ন শাখার হোমো ইরেক্টাস অর্থাৎ প্রায় মানুষেরা প্রাচীন প্রস্তর যুগের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রাচীন প্রস্তর যুগের হাতিয়ার:
এই যুগের মানুষ বিভিন্ন ধরনের পাথর ও হাড়ের তৈরি হাতিয়ার ব্যবহার করত এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস করত। দক্ষিণ আফ্রিকার অস্ট্রালোপিথেকাস নামে মানবগোষ্ঠী সর্বপ্রথম পাথরের হাতিয়ারের ব্যবহার শুরু করে। এ যুগের মানুষ প্রকৃতি থেকে যে আকারের পাথরকে পেত কোনো আকারগত পরিবর্তন না করেই সেটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাথর ভেঙে ধারালো ও তীক্ষ্ণ করার চেষ্টা করত বলেও মনে করা হয়। তারা একই হাতিয়ার দিয়ে মাংস কাটা, কাঠ কাটা, শিকার করা প্রভৃতি বিভিন্ন কাজ করত। প্রথমদিকের এই সাধারণ হাতিয়ার ‘হাত-কুঠার’ (Hand-Axe) নামে পরিচিত। ক্রমে তারা পাথরের বল্লম, ছুরি, ছুঁচ, হারপুন, র্যাদা প্রভৃতি হাতিয়ার তৈরি করতে শুরু করে। এ যুগের হাতিয়ারগুলি হত অমসৃণ এবং বৃহদাকার। এ যুগের শেষদিকে মানুষ তিরধনুক আবিষ্কার করে।
প্রাচীন প্রস্তর যুগের জীবিকা:
পশু শিকার করে পশুর মাংস সংগ্রহ করাই ছিল প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষের প্রধান জীবিকা। প্রথমদিকে ছোটো আকারের প্রাণী শিকার করলেও প্রাচীন প্রস্তর যুগে পশুশিকার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তারা দলবদ্ধ হয়ে ম্যামথ, বাইসন, বল্গা হরিণ প্রভৃতি বড়ো পশুশিকারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। এ ছাড়া এ যুগের মানুষ বনেজঙ্গলে ঘুরে গাছের ফলমূল সংগ্রহ করত, পাখির ডিম সংগ্রহ করত, মাছ ধরত ইত্যাদি। আগুনের ব্যবহার জানত না বলে তারা কাঁচা মাংস খেত।
প্রাচীন প্রস্তর যুগের বাসস্থান:
আদিম মানুষ প্রাচীন প্রস্তর যুগের প্রথমদিকে খোলা আকাশের নীচে বসবাস করত। পরবর্তীকালে তারা গুহার ভেতরে বা পাহাড়ের ঝুলন্ত পাথরের নীচে বসবাস করত। পরবর্তীকালে তারা গাছের ডালপালা, লতাপাতা, পশুর চামড়া প্রভৃতি দিয়ে তাদের আস্তানা তৈরি করত। তারা গাছের ছাল বা পশুর চামড়া পরিধান করত।
প্রাচীন প্রস্তর যুগের সমাজজীবন:
প্রাচীন প্রস্তর যুগ থেকেই মানুষ দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে শুরু করে। দলবদ্ধ হয়ে বসবাস ও জীবিকানির্বাহের ফলে আদিম মানুষের মধ্যে সামাজিক ধারণা গড়ে উঠেছিল। কেউ কেউ মনে করেন যে, এই যুগে আদিম মানুষের সমাজে পরিবারও গড়ে উঠেছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আদিম মানুষের দলবদ্ধতার প্রধানত দুটি কারণ ছিল—
[i] শিকার: ম্যামথ, বাইসন, বলগা হরিণ প্রভৃতি বড়ো আকারের প্রাণী শিকার করতে গেলে দলগত শক্তির প্রয়োজন ছিল।
[ii] পশুর আক্রমণ: বসতি অঞ্চলে হিংস্র পশুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে অস্ত্রশস্ত্র -সহ দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে হত।
এই যুগের সমাজ ছিল পিতৃতান্ত্রিক। পরিবার ও সমাজজীবনে পুরুষের তুলনায় নারীদের প্রাধান্য বেশি ছিল। নারীদের এই প্রাধান্য অন্তত নব্যপ্রস্তর যুগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
প্রাচীন প্রস্তর যুগের অস্তিত্বের নিদর্শন:
আফ্রিকার গ্রে রিফ্ট উপত্যকায়, ইউরোপের কিছু অঞ্চলে, ভারতের পাঞ্জাবের সোয়ান নদী উপত্যকা ও মাদ্রাজে প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষের অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। আশ্চর্যের বিষয় যে, এ যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মানুষগুলি আলাদা হলেও তাদের তৈরি হাতিয়ারগুলিতে অদ্ভুত মিল লক্ষ করা যায়।
প্রাচীন প্রস্তর যুগের শুরু হয় অন্তত ৫০ হাজার বছর আগে এবং শেষ হয় প্রায় ১৫,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। পিকিং মানব, জাভা মানব, আটলানথ্রোপাস মানব (আলজেরিয়া), ওলড়ভাই মানব (তাঞ্জানিয়া), নিয়ানডারথাল মানব-সহ বিভিন্ন শাখার হোমো ইরেক্টাস অর্থাৎ প্রায় মানুষেরা প্রাচীন প্রস্তর যুগের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রাচীন প্রস্তর যুগের হাতিয়ার:
এই যুগের মানুষ বিভিন্ন ধরনের পাথর ও হাড়ের তৈরি হাতিয়ার ব্যবহার করত এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস করত। দক্ষিণ আফ্রিকার অস্ট্রালোপিথেকাস নামে মানবগোষ্ঠী সর্বপ্রথম পাথরের হাতিয়ারের ব্যবহার শুরু করে। এ যুগের মানুষ প্রকৃতি থেকে যে আকারের পাথরকে পেত কোনো আকারগত পরিবর্তন না করেই সেটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাথর ভেঙে ধারালো ও তীক্ষ্ণ করার চেষ্টা করত বলেও মনে করা হয়। তারা একই হাতিয়ার দিয়ে মাংস কাটা, কাঠ কাটা, শিকার করা প্রভৃতি বিভিন্ন কাজ করত। প্রথমদিকের এই সাধারণ হাতিয়ার ‘হাত-কুঠার’ (Hand-Axe) নামে পরিচিত। ক্রমে তারা পাথরের বল্লম, ছুরি, ছুঁচ, হারপুন, র্যাদা প্রভৃতি হাতিয়ার তৈরি করতে শুরু করে। এ যুগের হাতিয়ারগুলি হত অমসৃণ এবং বৃহদাকার। এ যুগের শেষদিকে মানুষ তিরধনুক আবিষ্কার করে।
প্রাচীন প্রস্তর যুগের জীবিকা:
পশু শিকার করে পশুর মাংস সংগ্রহ করাই ছিল প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষের প্রধান জীবিকা। প্রথমদিকে ছোটো আকারের প্রাণী শিকার করলেও প্রাচীন প্রস্তর যুগে পশুশিকার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তারা দলবদ্ধ হয়ে ম্যামথ, বাইসন, বল্গা হরিণ প্রভৃতি বড়ো পশুশিকারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। এ ছাড়া এ যুগের মানুষ বনেজঙ্গলে ঘুরে গাছের ফলমূল সংগ্রহ করত, পাখির ডিম সংগ্রহ করত, মাছ ধরত ইত্যাদি। আগুনের ব্যবহার জানত না বলে তারা কাঁচা মাংস খেত।
প্রাচীন প্রস্তর যুগের বাসস্থান:
আদিম মানুষ প্রাচীন প্রস্তর যুগের প্রথমদিকে খোলা আকাশের নীচে বসবাস করত। পরবর্তীকালে তারা গুহার ভেতরে বা পাহাড়ের ঝুলন্ত পাথরের নীচে বসবাস করত। পরবর্তীকালে তারা গাছের ডালপালা, লতাপাতা, পশুর চামড়া প্রভৃতি দিয়ে তাদের আস্তানা তৈরি করত। তারা গাছের ছাল বা পশুর চামড়া পরিধান করত।
প্রাচীন প্রস্তর যুগের সমাজজীবন:
প্রাচীন প্রস্তর যুগ থেকেই মানুষ দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে শুরু করে। দলবদ্ধ হয়ে বসবাস ও জীবিকানির্বাহের ফলে আদিম মানুষের মধ্যে সামাজিক ধারণা গড়ে উঠেছিল। কেউ কেউ মনে করেন যে, এই যুগে আদিম মানুষের সমাজে পরিবারও গড়ে উঠেছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আদিম মানুষের দলবদ্ধতার প্রধানত দুটি কারণ ছিল—
[i] শিকার: ম্যামথ, বাইসন, বলগা হরিণ প্রভৃতি বড়ো আকারের প্রাণী শিকার করতে গেলে দলগত শক্তির প্রয়োজন ছিল।
[ii] পশুর আক্রমণ: বসতি অঞ্চলে হিংস্র পশুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে অস্ত্রশস্ত্র -সহ দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে হত।
এই যুগের সমাজ ছিল পিতৃতান্ত্রিক। পরিবার ও সমাজজীবনে পুরুষের তুলনায় নারীদের প্রাধান্য বেশি ছিল। নারীদের এই প্রাধান্য অন্তত নব্যপ্রস্তর যুগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
প্রাচীন প্রস্তর যুগের অস্তিত্বের নিদর্শন:
আফ্রিকার গ্রে রিফ্ট উপত্যকায়, ইউরোপের কিছু অঞ্চলে, ভারতের পাঞ্জাবের সোয়ান নদী উপত্যকা ও মাদ্রাজে প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষের অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। আশ্চর্যের বিষয় যে, এ যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মানুষগুলি আলাদা হলেও তাদের তৈরি হাতিয়ারগুলিতে অদ্ভুত মিল লক্ষ করা যায়।
1 মন্তব্যসমূহ
Good job
উত্তরমুছুন