পেশাদারী শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব:
ইতিহাস হল মানব জাতির অতীত কর্মকাণ্ডে ধারাবাহিক কালানুক্রমিক লিখিত বিবরণ। ইতিহাস থেকে আমরা অতীতের কোনো দেশ বা জাতির অতীত সম্পর্কে যেমন জানতে পারি ঠিক তেমনিই বর্তমানকে অনুধাবন করতে এবং ভবিষ্যতের পথ রচনা করতে ইতিহাসের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।নিম্নে পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো -
অতীতের প্রতিচ্ছবি:
ইতিহাস হল অতীতের আয়না। অতীতে ঘটে যাওয়া কাহিনীগুলি সযত্নে সংরক্ষণ করে রাখে ইতিহাস। বিভিন্ন সভ্যতার ক্রমবিকাশ, বিভিন্ন জাতির উত্থান-পতন, বিভিন্ন রাষ্ট্র ও রাজা, বাদশার কর্মকাণ্ড প্রভৃতি সব ঘটনা ইতিহাসে সংরক্ষিত হয়। সংরক্ষিত ইতিহাসের কল্যাণকর দিকগুলি অনুসরণ করে বর্তমান প্রজন্ম সুপথে পরিচালিত হতে পারে।
বর্তমানের ভিত্তি:
অতীতের ওপর ভিত্তি করেই বর্তমান দাঁড়িয়ে আছে, ইতিহাস হল অতীতের সাক্ষী। তাই বর্তমান কে ভালোভাবে জানতে হলে, অতীত ইতিহাসকে জানতে হবে। তাই ইতিহাস বর্তমানকে জানার সুযোগ করে দেয়।
পথপ্রদর্শক রূপে ইতিহাস:
সমাজ ও জাতির ধারাবাহিক অগ্রগতিতে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন শাসকগণ যে সকল ভুল ত্রুটি করেছেন তার ফলে দেশ ও জাতির সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বা কোন বিশেষ পদক্ষেপ দেশ বা জাতির ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে, এর ব্যাখ্যা ইতিহাসে পাওয়া যায়। এই সঠিক ঘটনাগুলি পদক্ষেপগুলি বর্তমানে আমাদের পথ প্রদর্শক এর ভূমিকা পালন করে।
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উন্নয়ন:
ইতিহাস থেকে অতীতের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কার্যকলাপ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায়। কোন শাসকের কোন রাজনৈতিক পদক্ষেপ ভুল ছিল কিনা, বা কোন ত্রুটিপূর্ণ প্রশাসনিক পদক্ষেপের ফলে সেখানকার জাতীয় জীবনে বিপদ ঘনিয়ে এসেছিল কিনা, অথবা কোন শাসক কোন পদক্ষেপ এর সাহায্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক উন্নতি ঘটাতে পেরেছিলেন তার বিস্তৃতি ব্যাখ্যা ইতিহাসে পাওয়া যায়।
জ্ঞানের বিকাশ:
ইতিহাস হল সর্ববৃহৎ জ্ঞান ভান্ডার। জ্ঞানের সকল শাখা গুলি যেমন – সাহিত্য, ধর্মনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, বিপ্লব, আন্দোলন, মহাপুরুষের কর্মকাণ্ড সকলেই ইতিহাসের আলোচনায় স্থান লাভ করে।
সাংস্কৃতিক অগ্রগতি:
ইতিহাসের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জাতির সাংস্কৃতিক জীবনের অগ্রগতি ঘটতে থাকে। ইতিহাস জানতে সাহায্য করে আমাদের বর্তমান সংস্কৃতি, অতীতের সংস্কৃতির ধারাবাহিক বিবর্তনের পরিণাম বা ফল। অর্থাৎ অতীতের সংস্কৃতির ওপর কোনো দেশ বা জাতির বর্তমান সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে আছে।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সতর্কতা:
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সভ্যতা ধ্বংস হয়। বহুজাতিক সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
যেমন – ছিয়াত্তরের মন্বন্তর বা পঞ্চাশের মন্বন্তরে বাংলার ব্যাপক প্রাণহানি ব্রিটিশ শাসনের ত্রুটিপূর্ণ শাসন নীতির ফলে হয়েছিল। পরবর্তীকালে বিভিন্ন গবেষণায় এর থেকে প্রতিকারের উপায় বের করা হয়। এর ফলে বর্তমানে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়।
জাতীয়তাবাদের বিকাশ:
ইতিহাস কোন দেশ জাতির অতীত ঐতিহ্য তুলে ধরে। এর ফলে সেই দেশ বা জাতির মধ্যে জাতীয়তাবোধের বিকাশ ঘটে। এর ফলে একটি জাতি বহিরাগত শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, দেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
যেমন, ভারত ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ জাতীয়তাবাদী বিকাশের ফলে সম্ভব হয়েছিল।
আত্মপ্রত্যয়ের বিকাশ:
ইতিহাস কোন জাতির জীবনে আত্মপ্রত্যয়ের বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়। অতীতে বিভিন্ন মানবজাতি বা মহান ব্যক্তি বিপুল কর্মকাণ্ড করেছেন তাই ইতিহাস থেকে বর্তমান প্রজন্মের মানুষ জানতে পারে। এর ফলে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে আত্মপ্রত্যয় এর বিকাশ ঘটে।
পরিশেষে বলা যায় বর্তমান কালের ইতিহাস শুধু রাজা বাদশা বা সাম্রাজ্যের উত্থান পতনের কাহিনী নয়। মানবসমাজে ধারাবাহিক বিবর্তন, সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি অর্থনীতি সংস্কৃতি প্রকৃতির সবকিছুই ইতিহাসে আলোচ্য বিষয়। এই সব বিষয় সম্পর্কে সার্বিক জ্ঞান লাভের জন্য ইতিহাস পাঠ অত্যন্ত জরুরী। তবে এই প্রসঙ্গে কে কেন্দ্র করে গড়ে ঐতিহাসিক হেগেল আক্ষেপ করে বলেছেন যে "ইতিহাসের দুর্ভাগ্য যে, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।" ফলস্বরূপ এর পরিণতি হয় ভয়ংকর।
0 মন্তব্যসমূহ