লিখনপদ্ধতির উদ্ভাবন ও লিখিত বিবরণের অস্তিত্বকে ‘ঐতিহাসিক যুগের’ সূচনা হিসেবে ধরা হয়। এদিক থেকে বলা যায় যে, পৃথিবীর সব দেশে একই সময়ে লিপি বা বর্ণমালার আবির্ভাব ঘটেনি এবং এর ফলে সর্বত্র একই সময়ে ‘ঐতিহাসিক যুগের’ সূচনা হয়নি।
মিশর ও মেসোপটেমিয়ার ঐতিহাসিক যুগ: খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের কাছাকাঠি সময় থেকেই মিশর, মেসোপটেমিয়া প্রভৃতি দেশে লিপির প্রচলন হয়েছিল এবং এগুলির পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়েছে। এসময় থেকেই এইসব দেশের রাজবংশ, রাজন্যবর্গ এবং সন-তারিখের মোটামুটি লিখিত বিবরণ পাওয়া যায়।
ভারতের ঐতিহাসিক যুগ:
আর্যসভ্যতার যুগে বিশাল ও অনুপম সাহিত্য সৃষ্টি হলেও আর্যদের কোনো লিপিজ্ঞান ছিল না বলেই অনুমান করা হয়। কারও কারও মতে প্রাচীন ভারতের শিলালিপিগুলির মধ্যে মৌর্য সম্রাট অশোকের শিলালিপিগুলিই (২৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পরবর্তী) হল প্রাচীনতম, যেগুলির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তাই কেউ কেউ ভারতে ‘ঐতিহাসিক যুগের’ সূচনাকাল হিসেবে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতককে চিহ্নিত করে থাকে।
ভারতের ঐতিহাসিক যুগ প্রসঙ্গে ভিন্ন মত:
আবার অনেকে সোহগোর তাম্রলিপিকেই ভারতের ক্ষেত্রে প্রাচীনতম লিপি বলে মনে করেন। তাঁদের মতে এই লিপিটি অশোকের জন্মের পঞ্চাশ বছর পূর্বে রচিত। উত্তর ভারতে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের পরবর্তীকালে বিভিন্ন বৌদ্ধ ও জৈন গ্রন্থ রচিত হলে সেগুলি থেকে সমসাময়িক বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য জানা যায়। কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড . দিলীপকুমার চক্রবর্তী ভারতের ঐতিহাসিক যুগের সূচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে আরও পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন। তিনি বলেছেন যে, “খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের আগে গাঙ্গেয় উপত্যকায় লিপি ছিল না এটা অবান্তর কথা হওয়াই স্বাভাবিক।” বক্তব্যের সপক্ষে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যে, খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে পাণিনির ব্যাকরণ রচনা কি কখনও লিপি প্রচলনের পূর্বে হতে পারে। তাই কেউ কেউ মনে করেন যে, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের পরবর্তীকালেই ভারতে ঐতিহাসিক যুগের সূচনা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ