কর্কটক্রান্তি রেখা ও মকরক্রান্তি রেখার দু'পাশে ২৫°- ৩৫° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে সারাবছর ধরে বায়ুর উচ্চচাপ দেখা যায়। ক্রান্তীয় অঞ্চলের শীতল ও ভারী বায়ু নিম্নমুখী হওয়ায় বায়ুর কোনো পার্শ্বপ্রবাহ থাকে না, এই অঞ্চলকে 'অশ্ব অক্ষাংশ' বলা হয়।
নিরক্ষীয় অঞ্চলের উষ্ণ, আর্দ্র ও লঘু বায়ু পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ঘুরে ক্রমশ প্রসারিত, শীতল ও ভারী হয়ে দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলে নেমে আসে। আবার, সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চল থেকে শীতল ও উচ্চচাপের ভারী বায়ু ভূপৃষ্ঠ বরাবর নিরক্ষরেখার দিকে অগ্রসর হয়। কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখার কাছে এই দুই ভারী বায়ু মিলিত হয়ে উচ্চচাপ বলয়-এর সৃষ্টি করে। এই বায়ু প্রধানত নিম্নমুখী (মকরক্রান্তি রেখার কাছে) বা ঊর্ধমুখী (কর্কটক্রান্তি রেখার কাছে) হওয়ায় এই দুই অঞ্চলের বায়ুর কোনো পার্শ্বপ্রবাহ থাকে না, তাই এখানকার ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বায়ুপ্রবাহ বিশেষ না থাকায় ভূপৃষ্ঠের ওপর সর্বদা একপ্রকার শান্তভাব বজায় থাকে। তাই একে কর্কটীয় ও মকরীয় শান্তবলয়ও বলা হয়ে থাকে।
অশ্ব অক্ষাংশের নামকরণঃ
ষোড়শ শতকে পালতোলা জাহাজগুলি উভয় গোলার্ধের এই শান্ত বলয়ে এসে উপস্থিত হলে পর্যাপ্ত বায়ুপ্রবাহের অভাবে গতিহীন হয়ে পড়তো। ফলে জাহাজগুলির সমুদ্রযাত্রার সময়সীমা আশাতীতভাবে দীর্ঘায়িত হয়ে পড়তো। এমতাবস্থায়, আমেরিকা উপনিবেশে সরবরাহের উদ্দেশ্যে ইউরোপ ও মধ্য প্রাচ্য থেকে আসা বাণিজ্যিক ঘোড়াভর্তি জাহাজগুলি এই শান্ত বলয়ে এসে পৌছালে মাঝ সমুদ্রে তাদের অনেকদিন অপেক্ষা করতে হতো। এই পরিস্থিতিতে বিলম্বিত সমুদ্রযাত্রাকালীন খাদ্য ও পানীয় জলের সংকট কমাতে এবং জাহাজগুলিকে পূর্বাপেক্ষা হালকা করার জন্য জাহাজগুলি থেকে কিছু ঘোড়া সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হতো। এইরকম অসংখ্য দুর্ঘটনার কারণে এই নির্দিষ্ট আঞ্চলিক অবস্থানদ্বয়ের 'অশ্ব অক্ষাংশ' (Horse Latitude) নামকরণ করা হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ