গ্রাম পঞ্চায়েত (Gram Panchayat).

গ্রাম পঞ্চায়েতের গঠন:

গ্রাম পঞ্চায়েত ৫ থেকে ৩০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। সদস্যগণ সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত হন। সাধারণত প্রতি ৯০০ ভোটদাতা পিছু একজন করে সদস্য থাকেন।

গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন সংরক্ষণ:
মোট আসনের ৫০ শতাংশ মহিলাদের জন্য এবং তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের ভিত্তিতে আসন সংরক্ষিত থাকবে [২৪৩(D) ধারা]।

গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের যোগ্যতা:
  • গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের বয়স ন্যূনতম একুশ বছর হতে হবে।
  • সংশ্লিষ্ট গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার ভোটার হতে হবে।


গ্রাম পঞ্চায়েতের কার্যকাল:
গ্রাম পঞ্চায়েতের কার্যকাল পাঁচ বছর [২৪৩(M) ধারা]।

গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের পদত্যাগ: পদত্যাগপত্র ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের কাছে পেশ করতে হয়।

গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের পদচ্যুতি:
  • মহকুমা শাসক পরপর শাসকের তিনটি সভায় গরহাজির হওয়া।
  • নীতি-বহির্ভূত কাজের জন্য ফৌজদারি আদালত কর্তৃক প্রদত্ত ছ'মাসের বেশি কারাদণ্ড ভোগ।
  • কর, শুল্ক বা মাশুল বকেয়া রাখার কারণে সদস্যদের পদচ্যুত করতে পারেন।

√ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হলে সর্বময় কর্তা।
√ গ্রাম পঞ্চায়েতের মিটিং মাসে অন্তত একবার  হবে।

গ্রাম পঞ্চায়েতের কোরাম:
বৈধ মিটিং -এর জন্য মোট সদস্যের অন্তত এক-তৃতীয়াশের উপস্থিতি আবশ্যক। এই সংখ্যাকে কোরাম বলে।

গ্রাম সংসদ: পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত সংশোধনী আইন, ১৯৭৩ -এর ১৬ (ক) ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার সকল ভোটদাতাদের নিয়ে গ্রাম সংসদ গঠিত হয়। এই মিটিং ডাকার জন্য সাত দিনের নোটিশ দিতে হয়। মোট সদস্য এক - দশমাংশ উপস্থিত থাকলে কোরাম হয়। গ্রাম সংসদের ষান্মাসিক মিটিং ডাকা হয় নভেম্বর মাসে এবং বার্ষিক মিটিং মে মাসে। ষান্মাসিক মিটিংয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের সর্বশেষ অডিট নিয়ে আলোচনা হয় এবং পরবর্তী বছরের পঞ্চায়েত বাজেট ও বাজেট সম্পর্কিত সংসদের সদস্যদের মতামত নিয়ে আলোচনা হয়।

গ্রাম সভা: পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত সংশোধনী আইনে, ১৯৭৩ -এর ১৬ (খ) ধারায় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অন্তর্ভুক্ত সকল ভোটদাতাকে নিয়ে গ্রামসভা গঠন করার কথা বলা হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে গ্রাম সভার বার্ষিক মিটিং ডাকা হয়।

উপসমিতি: গ্রাম পঞ্চায়েত পাঁচটি উপসমিতির কথা বলা হয়েছে:
(১) অর্থ ও পরিকল্পনা উপসমিতি।
(২) কৃষি ও প্রাণী সম্পদ বিকাশ উপসমিতি। 
(৩) শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য উপসমিতি।
(৪) নারী শিশু উন্নয়ন ও সমাজ কল্যাণ উপসমিতি।
(৫) শিল্প ও পরিকাঠামো উপসমিতি।
গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা ও কার্যাবলী:
  • উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।
  • দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্প গ্রহণ করা।
  • পানীয় জলের ব্যবস্থা ও পানীয় জলের দূষণ রোধের ব্যবস্থা করা।
  • জনস্বাস্থ্য ও জল নিকাশির ব্যবস্থা এবং অপরিচ্ছন্নতা নিবারণ করা।
  • ম্যালেরিয়া, বসন্ত, কলেরা বা অন্য কোনো ছোঁয়াচে রোগ যাতে না ছড়ায় তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করা।
  • রাস্তাঘাট ও জলাপথ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতি করা।

গ্রাম পঞ্চায়েতের আয়ের উৎস:
  • জমি ও গৃহাদির উপর গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃক ধার্য কর, শুল্ক, মাশুল, যানবাহনের লাইসেন্স ফি প্রভৃতি।
  • স্কুল, হাসপাতাল, ডিসপেনসারি, হলঘর, বাজার, বিশ্রামাগার প্রভৃতি সর্বসাধারণের ব্যবহার্য সম্পদ খাতে বা সেবামূলক কার্যাদির বিনিময়ে আয়।
  • কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার থেকে প্রাপ্ত আর্থিক অনুদান।
  • কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ।
  • দান থেকে সংগৃহীত অর্থ প্রভৃতি।

0 মন্তব্যসমূহ