গিরিজনি আলোড়নের ফলে অনুভূমিক পার্শ্বচাপের প্রভাবে পাললিক শিলায় ঢেউ এর মতো ভাঁজ পড়ে যে সুউচ্চ ও সুবিস্তৃত পর্বত সৃষ্টি হয়, তাকে ভঙ্গিল বা ভাঁজ পর্বত বলে।
ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির কারণ:
পাললিক শিলাস্তরে ভাঁজ পড়ে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়। ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির কারণ সম্পর্কে নানান মতবাদ প্রচলিত আছে, এদের মধ্যে প্রধান দুটি মতবাদ হল -
মহীখাত তত্ত্ব (Geosyncline Theory):
মহীখাত তত্ত্ব অনুসারে- এখন যেখানে ভঙ্গিল পর্বতগুলো অবস্থান করছে প্রাচীন কালে সেখানে ছিল বিশালাকার গহ্বর, ভূতাত্ত্বিক ভাষায় যার নাম মহীখাত বা অগভীর সমুদ্র। কালক্রমে যুগ যুগ ধরে পলি পড়ে এই সমুদ্রকে প্রায় ভরাট করে ফেলেছিল। ক্রমাগত পলি জমার ফলে ভূ-স্তরে নিম্নমুখী ও পার্শ্বমুখী চাপের সৃষ্টি হয় তার ফলে অগভীর সমুদ্রের সঞ্চিত পলিতে ভাঁজ পড়তে থাকে। পরবর্তী কালে এইসব ভাঁজগুলো দৃঢ়ভাবে সংবদ্ধ ও উঁচু হয়ে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি করেছে।
পাতসঞ্চালন তত্ত্ব (Plate Tectonic Theory):
পাতসঞ্চালন তত্ত্ব অনুসারে ভূ-ত্বকের গতিশীল পাতগুলির মধ্যে যেকোনো দুটি পাত যখন পরস্পরের কাছে চলে আসে, তখন ওই দুটিপাতের সংযোগরেখা বরাবর শিলাচ্যুতি ঘটে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্পের ফলে ভঙ্গিল পর্বত দুভাবে সৃষ্টি হতে পারে, যেমন:
পাললিক শিলাস্তরে ভাঁজ পড়ে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়। ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির কারণ সম্পর্কে নানান মতবাদ প্রচলিত আছে, এদের মধ্যে প্রধান দুটি মতবাদ হল -
মহীখাত তত্ত্ব (Geosyncline Theory):
মহীখাত তত্ত্ব অনুসারে- এখন যেখানে ভঙ্গিল পর্বতগুলো অবস্থান করছে প্রাচীন কালে সেখানে ছিল বিশালাকার গহ্বর, ভূতাত্ত্বিক ভাষায় যার নাম মহীখাত বা অগভীর সমুদ্র। কালক্রমে যুগ যুগ ধরে পলি পড়ে এই সমুদ্রকে প্রায় ভরাট করে ফেলেছিল। ক্রমাগত পলি জমার ফলে ভূ-স্তরে নিম্নমুখী ও পার্শ্বমুখী চাপের সৃষ্টি হয় তার ফলে অগভীর সমুদ্রের সঞ্চিত পলিতে ভাঁজ পড়তে থাকে। পরবর্তী কালে এইসব ভাঁজগুলো দৃঢ়ভাবে সংবদ্ধ ও উঁচু হয়ে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি করেছে।
পাতসঞ্চালন তত্ত্ব (Plate Tectonic Theory):
পাতসঞ্চালন তত্ত্ব অনুসারে ভূ-ত্বকের গতিশীল পাতগুলির মধ্যে যেকোনো দুটি পাত যখন পরস্পরের কাছে চলে আসে, তখন ওই দুটিপাতের সংযোগরেখা বরাবর শিলাচ্যুতি ঘটে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্পের ফলে ভঙ্গিল পর্বত দুভাবে সৃষ্টি হতে পারে, যেমন:
- প্রবল ভূ - আলোড়নের ফলে ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থান বসে গেলে বা উঁচু হলে শিলাস্তরে ছোটো ছোটো ভাঁজের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে ভূ আলোড়ন যতই বাড়ে, ভাঁজগুলো ততই বড়ো ও উঁচু হয়ে পরস্পরের কাছে চলে আসে এবং ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি করে।
- প্রচন্ড পার্শ্বচাপের ফলেও শিলাস্তরে ভাঁজ সৃষ্টি হয়। পার্শ্ব চাপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিলাস্তরের এই ভাঁজগুলো ক্রমশ বড়ো ও উঁচু হয়ে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি করতে পারে।
ভঙ্গিল পর্বতের শ্রেণিবিভাগ:
উৎপত্তির বয়স অনুসারে ভঙ্গিল পর্বত ২টি শ্রেণিতে বিভক্ত, যথা-
নবীন ভঙ্গিল পর্বত (Young Fold Mountain):
৫-৮ কোটি বছর আগে টার্শিয়ারি যুগে সৃষ্ট ভঙ্গিল পর্বতকে নবীন ভঙ্গিল পর্বত বলে। এগুলি টার্শিয়ারি বা আল্পীয় গিরিক্রমের পর্বত। এগুলি পৃথিবীতে সর্বশেষ গঠিত পর্বত এবং পর্বত গঠন কাজ এখনো চলছে এবং উচ্চতা ক্রমশ বাড়ছে। এরা অ্যালপাইন গিরিক্রমের অন্তর্গত।
উদাহরণ: এশিয়ার হিমালয়, ইউরোপে আল্পস, উঃ আমেরিকা রকি, দঃ আমেরিকায় আন্দিজ।
প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত (Old Fold Mountain):
২২-৬০ কোটি বছর আগে প্যালিয়োজেয়িক ও প্রিক্যামব্রিয়ান মহাযুগে সৃষ্ট ভঙ্গিল পর্বতকে প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত বলে। পর্বত গঠন কাজ পুরোপুরি বন্ধ। নগ্নীভবন ক্রিয়ার জন্য উচ্চতা ক্রমশ কমছে। অবশিষ্ট পর্বতরূপে অবস্থান করছে।
উদাহরণ: আরাবল্লী, ব্রিটেনে বোঁকন, রেকিন, ম্যালভার্ন, চার্নউড পর্বত, (চার্নিয়ান গিরিক্রম), স্কটল্যান্ড, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার পর্বত, ইউরোপে আপিনাইন ও গ্রাম্পিয়ান (ক্যালিডোনিয়ান), এশিয়ায় উরাল ও তিয়েনসান, অস্ট্রেলিয়ায় গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জ, উঃ আমেরিকায় অ্যাপালেশিয়ান (হার্সেনিয়ান গিরিক্রম)।
ভঙ্গিল পর্বতের বৈশিষ্ট্য:
ভঙ্গিল পর্বতের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
ভঙ্গিল পর্বতের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
- বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে কোমল পাললিক শিলায় ঢেউয়ের মতো ভাঁজ পড়ে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়।
- ভঙ্গিল পর্বতগুলি সাধারণত পাললিক শিলায় গঠিত হলেও অনেক সময় ভঙ্গিল পর্বতে আগ্নেয় এবং রূপান্তরিত শিলার সহাবস্থান পরিলক্ষিত হয় (কারণ, ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির সময় শিলাস্তরে ফাটল সৃষ্টি হলে, সেই ফাটল দিয়ে ভূগর্ভের ম্যাগমা লাভারূপে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে যা ধীরে ধীরে জমাট বেঁধে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি করে। এর পর কালক্রমে প্রচন্ড চাপ ও তাপের ফলে আগ্নেয় শিলা ও পাললিক শিলা রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয়)।
- ভঙ্গিল পর্বতের উপরের দিকের ভাঁজকে ঊর্ধ্বভঙ্গ [Anticline] ও নীচের দিকের ভাঁজকে অধোভঙ্গ [Syncline] বলে।
- ভঙ্গিল পর্বতের ভাঁজগুলো বিভিন্ন রকমের হতে পারে, যেমন- প্রতিসম ভাঁজ, অপ্রতিসম ভাঁজ, একটি ভাঁজের উপর অন্য একটি ভাঁজের [Overfold] এসে পড়া প্রভৃতি।
- প্রবল ভূ-আলোড়নের জন্য ভঙ্গিল পর্বতে ভাঁজ ছাড়াও অনেক চ্যুতি বা ফল্ট (Fault) দেখা যায়।
- প্রধানত সমুদ্র গর্ভ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল বলে ভঙ্গিল পর্বতে জীবাশ্ম (Fossil) দেখা যায়।
- ভঙ্গিল পর্বতগুলো সাধারণত প্রস্থের তুলনায় দৈর্ঘে অনেক বেশি বিস্তৃত হয়।
- ভঙ্গিল পর্বতগুলো সাধারণত বহু শৃঙ্গবিশিষ্ট ও ছুঁচালো হয়।
- ভঙ্গিল পর্বতের গঠন স্থায়ী নয়।
- উৎপত্তিকালের তুলনামূলক বিচারে ভঙ্গিল পর্বতকে নবীন (হিমালয়) ও প্রাচীন (আরাবল্লী) এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
0 মন্তব্যসমূহ