উনিশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয় একদল যুবক যাঁরা দার্শনিক বেথামের হিতবাদী আদর্শে দীক্ষিত হিন্দু কলেজের অধ্যাপক ডিরোজিও -র নেতৃত্বে এক সমাজসংস্কার আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলনই ‘নব্যবঙ্গ’ বা ‘ইয়ং বেঙ্গল’ আন্দোলন নামে পরিচিত।
ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর উদ্ভব:
রুশো, ভলতেয়ার, হিউম, লক প্রমুখ পাশ্চাত্য দার্শনিকের যুক্তিবাদী দর্শনে আকৃষ্ট হয় একদল বাংলার যুবক। হিন্দু কলেজের ইংরেজি সাহিত্য ও ইতিহাসের শিক্ষক ডিরোজিও -র আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই যুবগোষ্ঠী ইয়ং বেঙ্গল বা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীরূপে আত্মপ্রকাশ করে।
ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর আদর্শ:
ডিরোজিও ছিলেন স্বাধীন চিন্তা ও যুক্তিবাদের প্রচারক। তাঁরই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নব্যবঙ্গীয়রা দীর্ঘদিন ধরে হিন্দুসমাজে প্রচলিত কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তাঁরা চেয়েছিলেন, সমাজ থেকে যাবতীয় ভণ্ডামি বা লোক দেখানো নিয়মকানুনগুলির অবসান ঘটাতে। ডিরোজিও তাঁর অনুগামীদের বলতেন, “সত্যের জন্য বাঁচো, অসত্য থেকে মুক্ত হও”।
ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর সমাজসংস্কার:
ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর সদস্যরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন হিন্দু সমাজের জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। সতীদাহপ্রথাকে সমূলে বিনাশ করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। নব্যবঙ্গীয় সদস্যরা দাসপ্রথা, নারীনির্যাতন, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, বেগার প্রথা ইত্যাদির বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানান।
ডিরোজিও -র অবদান:
ডিরোজিও তাঁর অনুগামীদের অন্ধবিশ্বাস ছেড়ে যুক্তিবাদী ও সত্যসন্ধানী হওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁর রচিত ‘ফকির অব জঙ্গিরা’ ও ‘স্বদেশের প্রতি' এই দুই কবিতায় দেশাত্মবোধের পরিচয় মেলে। শিক্ষকরূপে তিনি তাঁর ছাত্রদের স্বাধীন চিন্তাশক্তিসম্পন্ন ও যুক্তিবাদী করে তোলেন। তিনি তাঁর অনুগামীদের নিয়ে গঠন করেন ভারতের প্রথম ছাত্র সংগঠন ‘অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন' নামে এক বিতর্ক সভা (১৮২৮ খ্রিঃ)।
ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন:
ডিরোজিও -র মৃত্যুর পর তাঁর ছাত্ররা কিছুদিন নব্যবঙ্গ আন্দোলন চালিয়ে যান। কিন্তু এরপর এদের অনেকেই ধীরে ধীরে এই আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিষ্ঠিত হন। ফলে নব্যবঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের অবসান ঘটে। নব্যবঙ্গ আন্দোলন ছিল শহরকেন্দ্রিক, সাধারণ মানুষের চাহিদা বা অভাব - অভিযোগ সম্পর্কে তাঁরা উদাসীন ছিলেন। এ ছাড়াও নব্যবঙ্গীয়দের অতি বাড়াবাড়ি, আদর্শচ্যুতি, গঠনমূলক কর্মসূচির অভাবে ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা: প্রথমতঃ প্রকাশ্যে পৈতে ছিঁড়ে পদদলিত করা, গঙ্গাজলের পবিত্রতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করা ইত্যাদি রাজ ধর্মপ্রাণ সাধারণ হিন্দুদের ব্যথিত করে। তাই নব্যবঙ্গের আদর্শ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি।
দ্বিতীয়তঃ এঁদের আন্দোলন ছিল মূলত শহরকেন্দ্রিক এবং শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
তৃতীয়তঃ এঁদের কোনো গঠনমূলক কর্মসূচি ছিল না। তাই এঁরা জনসমর্থনও পাননি।
চতুর্থতঃ সাধারণত মানুষের চাহিদা বা অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে এঁরা উদাসীন ছিলেন।
1 মন্তব্যসমূহ
Merkur Super Platinum - Merkur - Situs Judi Bola Online
উত্তরমুছুনThe Merkur 토토사이트 Super Platinum razor 메리트 카지노 조작 is the largest and most stylish 메리트 카지노 쿠폰 safety razor Merkur has to offer, and this razor 코인카지노 쿠폰 is an absolute winner in any choegocasino.com twitter standard