মানব মস্তিষ্ক:
সুষুম্নাকান্ডের শীর্ষে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের যে স্ফীত অংশ করোটিকার মধ্যে অবস্থান করে তাকে মস্তিষ্ক বলে। মস্তিষ্ক স্নায়ুতন্ত্রের পরিচালক।মস্তিষ্ক তিনটি অংশে বিভক্ত, যথা –
- অগ্রমস্তিষ্ক।
- মধ্য মস্তিষ্ক।
- পশ্চাৎ মস্তিষ্ক।
অগ্রমস্তিষ্ক:
মস্তিষ্কের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশকে বলা হয় অগ্রমস্তিষ্ক। অগ্ৰমস্তিষ্ক মস্তিষ্কের প্রধান তিনটি অংশ নিয়ে গঠত।
যথা-
(ক) সেরেব্রাম।
(খ) থ্যালামাস।
(গ) হাইপােথ্যালামাস।
সেরেব্রাম:
মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ (মস্তিষ্কের প্রায় ৮০% গঠন করে) এবং মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশকে ঢেকে রাখে। দুটি সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার সমন্বয়ে সেরেব্রাম গঠিত।
খণ্ডদুটি ভেতরের দিকে কর্পাস ক্যালােসাম নামে চওড়া স্নায়ুগুচ্ছ দিয়ে যুক্ত। প্রতিটি সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার ৫টি খণ্ডে বিভক্ত। যথা- ফ্রন্টাল লােব, প্যারাইটাল লােব, অক্সিপিটাল লােব,টেম্পােরাল লােব ও লিম্বিক লােব।
সেরেব্রামের কাজ:
বাকশক্তি, স্মৃতি শক্তি, চিন্তা, বুদ্ধিবৃত্তি, সৃজনশীলতা, ইচ্ছা শক্তি, সহজাত প্রবৃত্তি, কর্মপ্রেরণা প্রভৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট এবং সর্বোপরি মানুষের ঐচ্ছিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
থ্যালামাস:
সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ারের নিচে দুটি ক্ষুদ্র ও ডিম্বাকৃতির থ্যালামাস থাকে যা ধূসর পদার্থ দিয়ে গঠিত।
থ্যালামাসের কাজ:
সংবেদী-উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং রিলে করে সেরেব্রামে পাঠায়। মানুষের ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক আচরণের প্রকাশ ঘটায়। ঘুমন্ত মানুষকে হঠাৎ জাগিয়ে তােলা ও পরিবেশ সম্পর্কে সতর্ক করে তােলে।
হাইপােথ্যালামাস:
এটি থ্যালামাসের ঠিক নিচে ধূসর পদার্থ দিয়ে গঠিত। এটি অন্ততঃ এক ডজন পৃথক অঞ্চলে বিভক্ত থাকে।
হাইপােথ্যালামাসের কাজ:
স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের সকল কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, রাগ, ভাল লাগা, ভীতি, আবেগ প্রভৃতির কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। পিটুইটারী গ্রন্থিও বিভিন্ন হরমােন নিঃসরণ করে।
অগ্র মস্তিষ্কের কাজ:
- সেরিব্রাম হলো প্রত্যেক অঙ্গ থেকে স্নায়ু তারণা গ্রহণের এবং প্রত্যেক অঙ্গে স্নায়ু তাড়না প্রেরণের উচ্চতর কেন্দ্র।
- দেহ সঞ্চালন সহ প্রত্যেক কাজ ও অনুভূতির কেন্দ্র হল সেরিব্রাম।
- সেরিব্রাম আমাদের চিন্তা, চেতনা, জ্ঞান, স্মৃতি, ইচ্ছা, বাকশক্তি ও ঐচ্ছিক পেশির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- কোন উদ্দীপকের প্রতি কি ধরনের সাড়া দিবে সে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে সেরিব্রাম।
- সকল প্রাণীর মধ্যে মানুষের অগ্র মস্তিষ্কের বিবর্তন সর্বাধিক অগ্রগামী ও বিকশিত তাই এটি সহজে প্রভৃতির নিয়ন্ত্রক ও বাকশক্তি নিয়ন্ত্রণকারী অংশ।
মধ্য মস্তিষ্ক:
পশ্চাৎ মস্তিষ্কের উপরের অংশ হলো মধ্য মস্তিষ্ক, এটি অগ্রমস্তিষ্ক পশ্চাৎ মস্তিষ্ক সংযুক্ত করে।
মধ্য মস্তিষ্কের কাজ:
- বিভিন্ন পেশার কাজের সমন্বয় সাধন ও ভারসাম্য রক্ষা করে।
- দর্শন ও শ্রবণ এর ক্ষেত্রেও রয়েছে মধ্য মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
- এটি অগ্র ও পশ্চাৎ মস্তিষ্কের মধ্যে যোগসূত্র রচনা করে।
পশ্চাৎ মস্তিষ্ক:
মধ্য মস্তিষ্কের পেছনে অবস্থিত এবং সেরিবেলাম, পনস ও মেডুলা অবলংগাটা নিয়ে গঠিত অংশকে পশ্চাৎ মস্তিষ্ক বলে।
সেরিবেলাম:
পনসের পৃষ্ঠভাগে অবস্থিত পশ্চাৎ মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশটিকে সেরিবেলাম বলে। এর বাইরের দিকে ধূসর পদার্থের আবরণ ও ভেতরের দিকের শ্বেত পদার্থ থাকে।
পনস:
মধ্য মস্তিষ্কের পেছনে অবস্থিত বল আকৃতির অংশকে পনস বলে। এটি মেডুলা অবলংগাটা এবং মধ্য মস্তিষ্কের মাঝখানে অবস্থিত। এটি একগুচ্ছ স্নায়ুর সমন্বয়ে তৈরি।
মেডুলা অবলংগাটা:
মস্তিষ্কের সবচেয়ে পেছনের অংশকে মেডুলা অবলংগাটা বলে। এর সামনের দিকে পনস, পেছনের দিকে সুষুম্নাকান্ডের উপরিভাগের সাথে যুক্ত থাকে।
পশ্চাৎ মস্তিষ্কের কাজ:
- সেরিবেলাম দেহের পেশী টান নিয়ন্ত্রণ, চলনে সমন্বয় সাধন, দেহের ভারসাম্য রক্ষা, দৌড়ানো এবং লাফানোর কাজে জড়িত পেশীগুলির কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে।
- পনস দেহের দু’পাশের পেশী কর্মকাণ্ড সমন্বয় করে এবং স্বাভাবিক শ্বাসক্রিয়ার হার নিয়ন্ত্রণ করে ।
- মেডুলা অবলংগাটা থেকে উৎপন্ন আর জোড়া করোটিক স্নায়ু খাদ্য গলাধঃকরণ, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, গলবিল ইত্যাদির কিছু কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া এই স্নায়ুগুলো শ্রবণ ও ভারসাম্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের সাথে জড়িত।
0 মন্তব্যসমূহ