ঐতিহাসিক বস্তুবাদ: (Historical materialism).

মার্কসীয় দর্শনের প্রধান সূত্র গুলির মধ্যে অন্যতম হলো ঐতিহাসিক বস্তুবাদ। কান্ট বলেছেন ––'মানবিক সম্পর্কের বিশেষ ক্ষেত্রে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের প্রয়োগ হল ঐতিহাসিক বস্তুবাদ'। এই মতবাদের মূল কথা হলো 'অর্থনীতি হল সমাজের ভিত্তি'। অর্থনীতির পরিবর্তন ঘটলে সমাজের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়েরও পরিবর্তন ঘটে।




সামাজিক পরিবর্তনের কারণ:-
মার্কসবাদ অনুসারে উৎপাদন পদ্ধতি হচ্ছে সব কিছুর মূল। এই উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটলে সমাজ কাঠামোর পরিবর্তন ঘটে। উৎপাদন পদ্ধতি বলতে উৎপাদন শক্তি এবং উৎপাদন সম্পর্কের সমন্বয়কে বোঝায়।


উৎপাদন শক্তি:- কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, শ্রমিক এবং তার শ্রমক্ষমতা ইত্যাদি হল উৎপাদন শক্তি।

উৎপাদন সম্পর্ক:- উৎপাদন প্রক্রিয়ার অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন মানুষের মধ্যে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাকে উৎপাদন সম্পর্ক বলে।
এদের মধ্যে উৎপাদন শক্তি সব থেকে গতিশীল পুরাতন সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমে নতুন উৎপাদন শক্তি গড়ে ওঠে। উৎপাদন সম্পর্ক একই হারে বিকশিত হয় না, ফলে উভয়ের মধ্যে বিরোধ ঘটে আর তার ফলে নতুন সমাজের সৃষ্টি হয়। দাস ক্যাপিটাল গ্রন্থে মার্কস বলেছেন –'প্রতিটি পুরাতন সমাজের গর্ভে যখন কোন নতুন সমাজের সৃষ্টি হয়, শক্তি তখন ধাত্রী হিসেবে কাজ করে'।


মানব সমাজের ক্রমবিকাশ:-
উৎপাদন শক্তি এবং উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্দ্বকে  কেন্দ্র করেই আদিম সাম্যবাদী সমাজ থেকে দাস সমাজ, দাস সমাজ থেকে সামন্ত সমাজ, সামন্ত সমাজ থেকে আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজের সৃষ্টি হয়েছিল।

সমালোচনা:-
মার্কসের এই মতবাদের বিরুদ্ধে বলা হয় –––
  • অর্থনৈতিক উপাদান ক্ষমতা লাভের একমাত্র ভিত্তি নয়। সামরিক শক্তির মাধ্যমেও যারা ক্ষমতায় আসেন তাদের ক্ষেত্রে অর্থনীতির কোন ভূমিকা থাকে না।
  • এই মতবাদে সমাজের গুণগত পরিবর্তন সাধনের জন্য বিপ্লবকে অপরিহার্য বলা হয়। কিন্তু সংস্কার এবং বিবর্তনের মাধ্যমেও সমাজের পরিবর্তন ঘটানো যায়।


       ঐতিহাসিক বস্তুবাদ মতবাদের সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও বলা যায় যে, মানব সমাজের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অন্যান্য উপাদানের ভূমিকা থাকলেও অর্থনৈতিক শক্তির ভূমিকায় যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ তা এ মতবাদ তুলে ধরেছে। তাছাড়াও এই মতবাদের মাধ্যমে মানব সমাজের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ কে একই সূত্রে আবদ্ধ করা যায়  এবং এর দ্বারা মানব সমাজের বিকাশ কে ধারাবাহিক ভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়েছে।

0 মন্তব্যসমূহ