ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার: (Right to Religious Freedom).

ভারতে ৪২তম সংবিধান সংশােধনের সাহায্যে সংবিধানের প্রস্তাবনায় 'ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দটির সংযােজন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হল সব ধর্মের প্রতি সমান মর্যাদা প্রদর্শন। সংবিধানের ২৫-২৮ নং ধারায় ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার ঘােষিত হয়েছে।





ভারতের সংবিধানের ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-


👉ধর্মপালন ও ধর্মপ্রচারের স্বাধীনতা:
সংবিধানের ২৫(১) নং ধারায় বলা হয়েছে বিবেকের স্বাধীনতা এবং ধর্মস্বীকার, ধর্মপালন ও ধর্মপ্রচারের স্বাধীনতা সব নাগরিকের রয়েছে।

       তবে জনস্বাস্থ্য, জনশৃঙ্খলা বা সামাজিক নীতিবােধ এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্র এই অধিকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ ছাড়া কোনাে বিশেষ আচার-অনুষ্ঠান কোনাে ধর্মের অঙ্গ কি না তা বিচার করার ক্ষমতা আদালতের রয়েছে বলে সুপ্রিমকোর্ট ১৯৮৮ সালে হানিফ কুরেশি বনাম বিহার রাজ্য মামলায় রায় দেন।

সংবিধানের ২৫(২) (ক) নং ধারায় বলা হয়েছে, ধর্মাচরণের সঙ্গে জড়িত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বা অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার রাষ্ট্রের রয়েছে। তা ছাড়া সামাজিক কল্যাণসাধন ও সমাজসংস্কারের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র প্রয়ােজনমতাে আইন প্রণয়ন করে ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

সংবিধানের ২৫(২) (খ) নং ধারায় বলা হয়েছে হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে সব হিন্দুধর্মাবলম্বী ব্যক্তির জন্য উন্মুক্ত রাখতে রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করতে পারবে। সংবিধানে হিন্দু শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে; এতে শিখ, জৈন এবং বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।



👉ধর্মীয় সম্প্রদায় ও ধর্মীয় গােষ্ঠীগুলির স্বাধীনতা:
সংবিধানের ২৬ নং ধারা অনুযায়ী প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায় বা ধর্মীয় গােষ্ঠীকে কয়েকটি অধিকার দেওয়া হয়েছে। সেগুলি হল-

ধর্ম বা দানের উদ্দেশ্যে সংস্থা স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ।

নিজেদের ধর্মীয় কার্যকলাপ নিজেরাই পরিচালনা করা।

স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন ও ভােগদখল করা।

আইন অনুযায়ী নিজস্ব সম্পত্তি পরিচালনা করা।


তবে রাষ্ট্র জনস্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা রক্ষার জন্য যে কোনাে ধর্মীয় সম্প্রদায় বা ধর্মীয় গােষ্ঠীর এই অধিকারগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।



👉কর আদায় সংক্রান্ত বিধিনিষেধ:
সংবিধানের ২৭ নং ধারায় ঘােষণা করা হয়েছে যে ধর্ম বা ধর্মসম্প্রদায়ের প্রসার বা রক্ষপাবেক্ষণের জন্য কোনাে ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে কর দিতে বাধ্য করা যাবে না।



👉শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মশিক্ষার বিধিনিষেধ:
সংবিধানের ২৮ নং ধারায় বলা হয়েছে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরােপুরি সরকারি সাহায্যে পরিচালিত হয় সেখানে ধর্মশিক্ষা দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া সরকার কর্তৃক স্বীকৃত বা আংশিকভাবে সরকারি অর্থে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার্থীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের বিনা অনুমতিতে ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা যাবে না। সম্পূর্ণ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবশ্য ধর্মশিক্ষা নিষেধ করা হয়নি। বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের দ্বারা পরিচালিত হলেও কোনাে দাতা বা অছির উইলে ধর্ম বিষয়ে শিক্ষাদানের কথা উল্লিখিত থাকলে, সেখানে ধর্মশিক্ষা দেওয়া যাবে।


➡️ধর্মনিরপেক্ষতা কি?
'ধর্মনিরপেক্ষতা' শব্দের অর্থ ধর্ম থেকে আলাদা।
এটি সরকার, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং জীবনের সাংস্কৃতিক দিক থেকে ধর্মকে পৃথক করে।
এখানে ধর্ম একটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়।



➡️ভারত কি ধরনের ধর্মনিরপেক্ষ দেশ?
ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ যার কোন রাষ্ট্রধর্ম নেই।
যাইহোক, ভারতে এর অর্থ এই যে, 
এখানে সকল ধর্ম ও বিশ্বাসের সমান সম্মান রয়েছে।
শব্দটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোরও একটি অংশ।  সংবিধানের ৪২ তম সংশোধনী দ্বারা এটি যুক্ত করা হয়েছিল।
এই ধারণা ভারতীয় গণতন্ত্রে উচ্চ সম্মান লাভ করে।
ধর্মনিরপেক্ষতাও ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যেমনটি বহু শতাব্দী ধরে এই দেশে সহ-অস্তিত্বের বিশ্বাসের দ্বারা দেখা যায়।
ভারতে সকল ধর্মীয় গোষ্ঠীর কোন বৈষম্য ছাড়াই একই ক্ষমতা আছে।

0 মন্তব্যসমূহ