২০১০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ভারতের শিক্ষার অধিকার আইন চালু হয়। এই আইনটি এখনও সকলের কাছে বিশেষ স্পষ্ট নয়। এর জন্য অর্থ কোথায় থেকে আসবে, রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক দায়দায়িত্ব কী অনুপাতে বন্টিত হবে, সে সম্পর্কে বিতর্ক এখনও চলছে।
তবে মােটামুটি ভাবে আইনের বিষয়গুলি নীচে সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করা হল :
- ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সের সব ছেলেমেয়েদের কাছে শিক্ষা হল একটি মৌলিক অধিকার।
- প্রতিটি পিতা-মাতা, অভিভাবক এই বয়সি ছেলেমেয়েদের বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাবে। যে অভিভাবকরা এই নিয়ম মানবেন না তারা শাস্তি পাবেন।
- সর্বশিক্ষা অভিযান কর্মসূচির মধ্য দিয়েই এটি বাস্তবায়িত হবে শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিও এর বাস্তবায়নে সরকার নির্দেশিত ভূমিকা পালন করবে।
- বর্তমানে সর্বশিক্ষা অভিযানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে যে আর্থিক ব্যয়ের অনুপাত বর্তমান (৫৫ : ৪৫) তা পরিবর্তিত হয়ে ৬৫ : ৩৫ হবে।
- আগামী ৫ বছরের মধ্যে এর জন্য আনুমানিক ব্যয় হবে ১.৭১ লক্ষ কোটি টাকা।
- এই আইন বাস্তবায়নে শিক্ষকই হবেন মূল ব্যক্তি। এই আইন অনুসারে নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত হবে ৩০:১। এর জন্য প্রয়ােজন হবে ৫ বছরে ৫.১ লক্ষ অতিরিক্ত শিক্ষক।
- এই আইন চালু হওয়ার ৫ বছরের মধ্যে সব শিক্ষককেই শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
- সরকার প্রতিটি গৃহে সমীক্ষা করে দেখবে যে এই বয়সের (৬ থেকে ১৪ বছর) সব ছেলেমেয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে কি না।
- রাজ্য সরকার ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন দেখবে, বাড়ি থেকে ১ কিমির মধ্যে যেন নিম্নপ্রাথমিক বিদ্যালয় থাকে (প্রথম ক্ষেত্রে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত) এবং ৩ কিমির মধ্যে যেন উচ্চপ্রাথমিক বিদ্যালয় (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি) থাকে। এই দূরত্বের মধ্যে যদি কোনাে কারণে বিদ্যালয় না থাকে, তাহলে ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য বিনা ব্যয়ে পরিবহণের ব্যবস্থা করা হবে, না হলে বিদ্যালয়ের কাছাকাছি তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষার অধিকার আইন (RTE), ২০০৯-এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল一
- ভারতের ৬-১৪ বছর বয়সি সকল শিশুর জন্য বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষা। বুনিয়াদি শিক্ষা সম্পূর্ণ করার আগে কোনও শিশুকে ফেল করানো, বহিষ্কার করা বা কোনও বোর্ডের পরীক্ষায় পাস করতে বাধ্য করা যাবে না।
- যদি ৬ বছরের বেশি বয়সি কোনও শিশু স্কুলে ভর্তি না হয়ে থাকে বা তার বুনিয়াদি শিক্ষা সম্পূর্ণ না হয়ে থাকে, তা হলে তাকে তার বয়সের উপযোগী শ্রেণিতে ভর্তি করাতে হবে। যদি কোনও শিশুকে তার বয়স অনুযায়ী কোনও শ্রেণিতে ভর্তি করে দেওয়া হয়, তা হলে সে যাতে অন্যদের সঙ্গে একই মানে পৌঁছতে পারে, সে জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বুনিয়াদি শিক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে ভর্তি হওয়া প্রতিটি শিশু বুনিয়াদি শিক্ষা সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা পাবে, এমনকী তার বয়স যদি ১৪ বছর পেরিয়ে যায় তা হলেও।
- ভর্তির জন্য বয়সের প্রমাণপত্র: বুনিয়াদি শিক্ষায় ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে শিশুর বয়স তার জন্মের শংসাপত্র অনুযায়ী নির্ণিত হবে। এই শংসাপত্র জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ নিবন্ধীকরণ আইন, ১৮৫৬ বা নির্দেশিত অন্য কোনও নথি দ্বারা প্রমাণিত হলেই হবে। শুধুমাত্র বয়সের শংসাপত্রের অভাবে কোনও শিশুর স্কুলে ভর্তি আটকানো যাবে না।
- যে শিশু বুনিয়াদি শিক্ষা শেষ করবে তাকে শংসাপত্র দিতে হবে।
- ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত নির্দিষ্ট করার বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে।
- প্রতিটি বেসরকারি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষের জন্য ২৫ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে।
- শিক্ষার গুণমানের উন্নতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- পাঁচ বছরের মধ্যে যথাযথ পেশাদার ডিগ্রি অর্জন করতে না পারলে শিক্ষকদের চাকরি যাবে।
- প্রতি তিন বছরের মধ্যে স্কুলের পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটাতে হবে (যেখানে সমস্যা আছে)। তা না হলে স্কুলের অনুমোদন বাতিল করা হবে।
- অর্থনৈতিক দায়িত্ব কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ভাগাভাগি করে বহন করবে।
0 মন্তব্যসমূহ