➡️ভূমিকম্প কাকে বলে?
👉ভূ-অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম ভাবে সৃষ্টি হওয়া কোন কম্পন যখন আকস্মিকভাবে ভূপৃষ্ঠের কিছু অংশকে ক্ষণিকের জন্য প্রচন্ড বা মৃদু আন্দোলিত করে তখন তাকে ভূমিকম্প বলে। ভূপৃষ্ঠ থেকে সাধারণত ৫-৭০০ কিমি গভীরতায় ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। পৃথিবীতে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫ লক্ষ বার ভূমিকম্প হয়।➡️ভূমিকম্পের কেন্দ্র কাকে বলে?
👉ভূ-অভ্যন্তরে যে স্থানে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বা ফোকাস বলে। ভূমিকম্পের এই কেন্দ্র ভূপৃষ্ঠ থেকে সাধারণত ৫-৭০০ কিমি গভীরতায় অবস্থান করে। তবে ১৫ থেকে ৬৫ কিমি গভীরতায় ভূমিকম্পের কেন্দ্র অবস্থান করলে তার তীব্রতা সবথেকে বেশি হয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে ভূকম্পন তরঙ্গের আকারে স্থিতিস্থাপক ভূত্বকের মধ্য দিয়ে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়।
➡️ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র কাকে বলে?
👉ভূমিকম্প কেন্দ্রের ঠিক সোজাসুজি উপরে অবস্থিত যে বিন্দুতে ভূমিকম্প তরঙ্গ প্রথম এসে পৌঁছায়, তাকে ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র বলে। এই উপকেন্দ্রে ভূমিকম্পের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি হয় এবং সেখান থেকে দূরত্ব অনুসারে তীব্রতা ক্রমশ কমতে থাকে।
➡️সমভূকম্পন রেখা কাকে বলে?
👉ভূমিকম্পের সমান তীব্রতা বিশিষ্ট স্থানগুলিকে যে কাল্পনিক রেখার সাহায্যে যুক্ত করে মানচিত্রে প্রদর্শন করা হয়,তাকে সমতীব্রতা রেখা বা সম ভূকম্পন রেখা বলে।
➡️ভূমিকম্পের ছায়া বলয় কাকে বলে?
👉ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নির্দেশকারী সরলরেখার সাপেক্ষে কেন্দ্রে উৎপন্ন ১০৫ ডিগ্রি কৌণিক দূরত্বের বাইরে S তরঙ্গ এবং ১০৫ -১৪২ ডিগ্রী কৌণিক দূরত্বের মধ্যে P তরঙ্গ ভূমিকম্পলিখ যন্ত্রে ধরা পড়ে না। ভূমিকম্প কেন্দ্রে বিপরীত দিকে এই দুই প্রকার তরঙ্গ বিহীন অঞ্চল কে ভূমিকম্পের ছায়া বলয় বলে।
➡️সিসমোগ্রাফ যন্ত্র কাকে বলে?
👉যে যন্ত্রের সাহায্যে ভূকম্পের তীব্রতা, স্থায়িত্ব, ভূমিকম্পের সময় ও ভূমিকম্পের কেন্দ্র ও উপকেন্দ্র সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়, তাকে ভূমিকম্পলেখ যন্ত্র বা সিসমোগ্রাফ বলে।
➡️রিখটার স্কেল কাকে বলে?
👉সিসমোগ্রাফ যন্ত্রের ওপর বসানো যে স্কেলের সাহায্যে ভূমিকম্পের তীব্রতা পরিমাপ করা হয়, তাকে রিখটার স্কেল বলে।
➡️ভূমিকম্প তরঙ্গের শ্রেনীবিভাগ: -
ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট তরঙ্গ গুলি প্রধানত ভিন্ন ভিন্ন সময় এসে সিসমোগ্রাফে ধরা পরে। সিসমোগ্রাফে লিপিবদ্ধ তরঙ্গ গুলি কে প্রকৃতিগত পার্থক্য অনুসারে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা -
১) প্রাথমিক তরঙ্গ।
২) গৌন তরঙ্গ।
৩) পৃষ্ঠ তরঙ্গ।
প্রাথমিক ও গৌন তরঙ্গ পৃথিবীর অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়ে বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায় বলে, এদের দেহ তরঙ্গও বলা হয়।
১) প্রাথমিক তরঙ্গ বা P তরঙ্গ - ভূ-অভ্যন্তরে উৎপন্ন হয়ে যে তরঙ্গ সর্বপ্রথম ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায় ও সিসমোগ্রাফে ধরা পরে, তাকে প্রাথমিক তরঙ্গ বলে।
প্রাথমিক তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য গুলি হল: -
২) গৌন তরঙ্গ বা S তরঙ্গ - প্রাথমিক তরঙ্গের পর যে তরঙ্গ সিসমোগ্রাফে ধরা পরে তাকে গৌন তরঙ্গ বলে।
গৌন তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য গুলি হল: -
৩) পৃষ্ঠ তরঙ্গ বা L তরঙ্গ: - ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তরঙ্গকে পৃষ্ঠ তরঙ্গ বলে।
পৃষ্ঠ তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য গুলি হল: -
পৃষ্ঠ তরঙ্গগুলি কে চলনের প্রকৃতি অনুসারে দুই ভাগে ভাগ করা হয় - রেইলি তরঙ্গ ও লাভ তরঙ্গ। রেইলি তরঙ্গ গুলি সমুদ্রের ঢেউ এর মতো উপর নিচে ওঠানামা করে এবং লাভ তরঙ্গ গুলি প্রস্থ বরাবর সাপের চলনের মতে তরঙ্গের সৃষ্টি করে।
➡️ভূমিকম্পের কারণ সমূহ: -
বিভিন্ন কারণে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে থাকে। ভূমিকম্পের কারণ গুলিকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা -
➡️ভূমিকম্পের প্রাকৃতিক কারণ গুলি হল: -
১] পাতের চলন জনিত ভূমিকম্প - পৃথিবীর ভূত্বক কতগুলি ছোটো বড়ো চলনশীল পাতের সমন্বয়ে গঠিত। এই রকম দুটি পাতের পরস্পরের দিকে বা পরস্পরের বিপরীত দিকে চলনের ফলে পাত সীমান্ত বরাবর ভূমিকম্প হয়ে থাকে। এই পাত চলন জনিত কারনেই সারা পৃথিবী ব্যাপী ভূমিকম্পের প্রধান কারণ। যেমন - প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা বরাবর, আল্পস - হিমালয় ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে, মধ্য মহাসাগরীয় শৈলশিরা প্রভৃতি অংশে প্রবল ভূমিকম্পের প্রধান কারণ হল পাতের চলন।
২] স্থিতিস্থাপক প্রত্যাঘাত মতবাদ - পৃথিবীর ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প গুলির কারণ হিসাবে H. F. Ried স্থিতিস্থাপক প্রত্যাঘাত মতবাদ প্রকাশ করেন। তার মতে ভূ- আন্দোলনের ফলে শিলাস্তরে প্রবল পীড়নের ফলে চ্যুতিতল বরাবর শিলার ভাঙন ও স্খলন ঘটলে আকস্মিক ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
৩] অগ্ন্যুৎপাত জনিত ভূমিকম্প - আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সময় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সাধারণত যে সব আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণ সহকারে অগ্ন্যুৎপাত ঘটায়, তার আশেপাশের অঞ্চল গুলিতে প্রবল ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
৪] ভূগর্ভস্থ বাষ্পরাশির চাপ - ভূগর্ভের মধ্যে সঞ্চিত বাষ্পপুঞ্জের পরিমান যখন অত্যাধিক হয়ে যায়, তখন তা প্রবল বেগে শিলাস্তরে ধাক্কা দেয়। এর ফলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের সন্নিহিত অংশে প্রচুর ফাটল থাকায় অভ্যন্তরীণ বাষ্প জনিত ভূমিকম্প প্রায়ই দেখা যায়।
৫] তাপীয় সংকোচন জনিত ভূমিকম্প - সৃষ্টির পর থেকে উত্তপ্ত পৃথিবী ক্রমশ তাপ বিকিরনের মাধ্যমে শীতল হচ্ছে। পৃথিবীর উপরিভাগ শীতল ও কঠিন হলেও অভ্যন্তরভাগ এখনো অত্যধিক উত্তপ্ত রয়েছে। ফলে উপরের ও নিচের স্তরের মধ্যে আয়তনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, তাই ভারসাম্য রক্ষার জন্য ভূপৃষ্ঠের কিছু অংশ অবনমিত হয়ে ভাঁজের সৃষ্টি করে। এরূপ পুনর্বিন্যাসের সময় মাঝে মাঝে ভূমিকম্প হতে পারে।
৬] ধ্বস - ভূপৃষ্ঠের উপরভাগে, বিশেষত পার্বত্য অঞ্চলে যখন ধ্বস নামে এবং তার ফলে খাড়া ঢাল বরাবর বিশাল পাথরের স্তূপ প্রবলবেগে নিচে পতিত হয়, তখন তার প্রভাবে ভূকম্পন অনুভূত হয়।
৭] হিমানি সম্প্রপাত - সুউচ্চ পর্বতমালার বরফাচ্ছন্ন শিখর থেকে বিশাল বরফের স্তূপ বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রবল বেগে নিচে পতিত হয়, যাকে হিমানি সম্প্রপাত বলে। এর ফলে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
➡️ভূমিকম্পের মনুষ্য সৃষ্ট কারণ: -
১] ভূগর্ভে বিস্ফোরণ - বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশ গুলি প্রায় ভূগর্ভে পারমানবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে থাকে। যার ফলে সেই বিস্ফোরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে তীব্র ভূকম্পন অনুভূত হয়।
২] কৃত্রিম জলাধার - নদীতে বাঁধ দিয়ে কৃত্রিম জলাধার নির্মান করলে জলাধারে সঞ্চিত জলের প্রচন্ড চাপে এবং সেই স্থানের ভূ গঠন সুস্থিত না হলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হতে পারে। যেমন - ১৯৬৭ মহারাষ্ট্রের কয়না নগরের কয়না বাঁধে সঞ্চিত জল রাশির চাপে ভূমিকম্প হয়েছিল।
➡️ভূমিকম্পের ফলাফল: -
ভূমিকম্পের ফলে ভূপৃষ্ঠের যেমন নানা রূপ পরিবর্তন সাধিত হয়, তেমনি বহু প্রানহানি ও জনপদ ধ্বংস হয়। ভূমিকম্পের ফলাফল গুলি হল -
১] ফাটল ও চ্যুতির সৃষ্টি - ভূমিকম্পের ফলে ভূপৃষ্ঠে অসংখ্য ফাটল ও চ্যুতির সৃষ্টি হয়। এই সব ফাটলের মধ্যে দিয়ে ভূগর্ভস্থ গরম জল ও বাষ্প বাইরে বেরিয়ে আসে। আবার চ্যুতির সৃষ্টি হলে ভূভাগ উপরে উঠে বা নিচে নেমে স্তূপ পর্বত ও গ্রস্ত উপত্যকার সৃষ্টি করে।
২] নদীর গতিপথ পরিবর্তন - ভূমিকম্পের ফলে ধ্বস জনিত কারণে নদীর গতিপথ রুদ্ধ হলে নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। যেমন - ১৯৫০ সালের ভূমিকম্পে আসামের দিবং নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছিল।
৩] সমুদ্রতলের পরিবর্তন - অনেক সময় সমুদ্র নিচে প্রবল ভূমিকম্প হলে সমুদ্র তলদেশের কোন অংশ উত্থিত হয়ে সামুদ্রিক দ্বীপ আবার অনেক সময় সমুদ্র মধ্যবর্তী অনেক দ্বীপ সমুদ্র তলদেশে অবনমিত হয়ে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
৪] সুনামি - সমুদ্র তলদেশে প্রবল ভূমিকম্প সংঘটিত হলে সমুদ্রের জল ব্যাপক ও বিধবংসী তরঙ্গের আকারে উপকূলের দিকে এগিয়ে এসে ব্যাপক ধবংসলীলা চালায়। এই সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস কে সুনামি বলে। যেমন - ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে এই রূপ সুনামি সংঘটিত হয়েছিল।
৫] ধ্বংসলীলা - ভূমিকম্প যেহেতু আকস্মিক ঘটনা, তাই হঠাৎ করে প্রবল ভূমিকম্প হলে শহর ও নগর নিমেষে ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়। অসংখ্য মানুষ, জীবজন্তু মৃত্যু মুখে পতিত হয়। রাস্তাঘাট, রেল, বাঁধ, সেতু ধ্বংস হয়ে যায়।
ভূমিকম্প বলয় - সারা পৃথিবীব্যাপী ভূমিকম্প হলেও সর্বত্র সমান ভাবে ভূমিকম্প হয় না। পৃথিবীর এমন কিছু অঞ্চল রয়েছে যেখানে সবথেকে বেশি ভূমিকম্প হয়ে থাকে। পৃথিবীর এই অঞ্চল গুলিকে তিনটি বলয়ে ভাগ করা হয়। যথা -
১] প্রশান্ত মহাসাগরীয় বলয় - প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে অবস্থান করা প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা বরাবর পৃথিবীর ৬৫% ভূমিকম্প হয়ে থাকে। এই বলয়ে অবস্থিত জাপানকে ভূমিকম্পের দেশ বলা হয়।
২] মধ্য মহাদেশীয় বলয় - হিমালয় ও আল্পস পার্বত্য অঞ্চলকে কেন্দ্র করে অবস্থিত এই বলয়ে পৃথিবীর ২১% মতো ভূমিকম্প হয়।
৩] মধ্য আটলান্টিক বলয় - আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝ বরাবর বিস্তৃত মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা টি প্রতিসারী পাত সীমান্তে অবস্থিত হওয়ায় এখানে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়ে থাকে।
১) প্রাথমিক তরঙ্গ।
২) গৌন তরঙ্গ।
৩) পৃষ্ঠ তরঙ্গ।
প্রাথমিক ও গৌন তরঙ্গ পৃথিবীর অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়ে বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায় বলে, এদের দেহ তরঙ্গও বলা হয়।
১) প্রাথমিক তরঙ্গ বা P তরঙ্গ - ভূ-অভ্যন্তরে উৎপন্ন হয়ে যে তরঙ্গ সর্বপ্রথম ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায় ও সিসমোগ্রাফে ধরা পরে, তাকে প্রাথমিক তরঙ্গ বলে।
প্রাথমিক তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য গুলি হল: -
- P তরঙ্গের প্রকৃতি শব্দ তরঙ্গের ন্যায়।
- এই তরঙ্গ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে অতিক্রমে সক্ষম।
- P তরঙ্গ যেদিকে অগ্রসর হয় বস্তুকনা গুলিও সেদিকে কম্পিত হয়, তাই একে ঠেলা তরঙ্গ বলে।
- P তরঙ্গ কে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গও বলা হয়ে থাকে।
- P তরঙ্গের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ছোট হয়।
- P তরঙ্গের গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ৫ থেকে ৮ কিমি হয়।
২) গৌন তরঙ্গ বা S তরঙ্গ - প্রাথমিক তরঙ্গের পর যে তরঙ্গ সিসমোগ্রাফে ধরা পরে তাকে গৌন তরঙ্গ বলে।
গৌন তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য গুলি হল: -
- S তরঙ্গের প্রকৃতি আলোক তরঙ্গের ন্যায়।
- এই তরঙ্গ কেবল মাত্র কঠিন মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে গমনে সক্ষম।
- এই তরঙ্গের ক্ষেত্রে বস্তুকনা গুলি ঢেউ এর মতো উপর নিচে ওঠা নামা করে বলে। একে অনুপ্রস্থ তরঙ্গ বা তির্যক তরঙ্গ বলে।
- এক্ষেত্রে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য P তরঙ্গের মতো হয়ে থাকে।
- এই তরঙ্গের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩.৫ থেকে ৭ কিমি পর্যন্ত হয়।
৩) পৃষ্ঠ তরঙ্গ বা L তরঙ্গ: - ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তরঙ্গকে পৃষ্ঠ তরঙ্গ বলে।
পৃষ্ঠ তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য গুলি হল: -
- P তরঙ্গ ও S তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠে পৌছানোর পর পৃষ্ঠ তরঙ্গ রূপে চারিদিকে ছড়িয়ে পরে।
- L তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠ বরাবর প্রবাহিত হয়।
- L তরঙ্গের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি হয়।
- L তরঙ্গের গতিবেগ সবচেয়ে কম হয়। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩.৫ কিমি থেকে ৫ কিমি।
পৃষ্ঠ তরঙ্গগুলি কে চলনের প্রকৃতি অনুসারে দুই ভাগে ভাগ করা হয় - রেইলি তরঙ্গ ও লাভ তরঙ্গ। রেইলি তরঙ্গ গুলি সমুদ্রের ঢেউ এর মতো উপর নিচে ওঠানামা করে এবং লাভ তরঙ্গ গুলি প্রস্থ বরাবর সাপের চলনের মতে তরঙ্গের সৃষ্টি করে।
➡️ভূমিকম্পের কারণ সমূহ: -
বিভিন্ন কারণে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে থাকে। ভূমিকম্পের কারণ গুলিকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা -
- প্রাকৃতিক কারণ।
- কৃত্রিম কারণ।
➡️ভূমিকম্পের প্রাকৃতিক কারণ গুলি হল: -
১] পাতের চলন জনিত ভূমিকম্প - পৃথিবীর ভূত্বক কতগুলি ছোটো বড়ো চলনশীল পাতের সমন্বয়ে গঠিত। এই রকম দুটি পাতের পরস্পরের দিকে বা পরস্পরের বিপরীত দিকে চলনের ফলে পাত সীমান্ত বরাবর ভূমিকম্প হয়ে থাকে। এই পাত চলন জনিত কারনেই সারা পৃথিবী ব্যাপী ভূমিকম্পের প্রধান কারণ। যেমন - প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা বরাবর, আল্পস - হিমালয় ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে, মধ্য মহাসাগরীয় শৈলশিরা প্রভৃতি অংশে প্রবল ভূমিকম্পের প্রধান কারণ হল পাতের চলন।
২] স্থিতিস্থাপক প্রত্যাঘাত মতবাদ - পৃথিবীর ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প গুলির কারণ হিসাবে H. F. Ried স্থিতিস্থাপক প্রত্যাঘাত মতবাদ প্রকাশ করেন। তার মতে ভূ- আন্দোলনের ফলে শিলাস্তরে প্রবল পীড়নের ফলে চ্যুতিতল বরাবর শিলার ভাঙন ও স্খলন ঘটলে আকস্মিক ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
৩] অগ্ন্যুৎপাত জনিত ভূমিকম্প - আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সময় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সাধারণত যে সব আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণ সহকারে অগ্ন্যুৎপাত ঘটায়, তার আশেপাশের অঞ্চল গুলিতে প্রবল ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
৪] ভূগর্ভস্থ বাষ্পরাশির চাপ - ভূগর্ভের মধ্যে সঞ্চিত বাষ্পপুঞ্জের পরিমান যখন অত্যাধিক হয়ে যায়, তখন তা প্রবল বেগে শিলাস্তরে ধাক্কা দেয়। এর ফলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের সন্নিহিত অংশে প্রচুর ফাটল থাকায় অভ্যন্তরীণ বাষ্প জনিত ভূমিকম্প প্রায়ই দেখা যায়।
৫] তাপীয় সংকোচন জনিত ভূমিকম্প - সৃষ্টির পর থেকে উত্তপ্ত পৃথিবী ক্রমশ তাপ বিকিরনের মাধ্যমে শীতল হচ্ছে। পৃথিবীর উপরিভাগ শীতল ও কঠিন হলেও অভ্যন্তরভাগ এখনো অত্যধিক উত্তপ্ত রয়েছে। ফলে উপরের ও নিচের স্তরের মধ্যে আয়তনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, তাই ভারসাম্য রক্ষার জন্য ভূপৃষ্ঠের কিছু অংশ অবনমিত হয়ে ভাঁজের সৃষ্টি করে। এরূপ পুনর্বিন্যাসের সময় মাঝে মাঝে ভূমিকম্প হতে পারে।
৬] ধ্বস - ভূপৃষ্ঠের উপরভাগে, বিশেষত পার্বত্য অঞ্চলে যখন ধ্বস নামে এবং তার ফলে খাড়া ঢাল বরাবর বিশাল পাথরের স্তূপ প্রবলবেগে নিচে পতিত হয়, তখন তার প্রভাবে ভূকম্পন অনুভূত হয়।
৭] হিমানি সম্প্রপাত - সুউচ্চ পর্বতমালার বরফাচ্ছন্ন শিখর থেকে বিশাল বরফের স্তূপ বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রবল বেগে নিচে পতিত হয়, যাকে হিমানি সম্প্রপাত বলে। এর ফলে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
➡️ভূমিকম্পের মনুষ্য সৃষ্ট কারণ: -
১] ভূগর্ভে বিস্ফোরণ - বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশ গুলি প্রায় ভূগর্ভে পারমানবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে থাকে। যার ফলে সেই বিস্ফোরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে তীব্র ভূকম্পন অনুভূত হয়।
২] কৃত্রিম জলাধার - নদীতে বাঁধ দিয়ে কৃত্রিম জলাধার নির্মান করলে জলাধারে সঞ্চিত জলের প্রচন্ড চাপে এবং সেই স্থানের ভূ গঠন সুস্থিত না হলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হতে পারে। যেমন - ১৯৬৭ মহারাষ্ট্রের কয়না নগরের কয়না বাঁধে সঞ্চিত জল রাশির চাপে ভূমিকম্প হয়েছিল।
➡️ভূমিকম্পের ফলাফল: -
ভূমিকম্পের ফলে ভূপৃষ্ঠের যেমন নানা রূপ পরিবর্তন সাধিত হয়, তেমনি বহু প্রানহানি ও জনপদ ধ্বংস হয়। ভূমিকম্পের ফলাফল গুলি হল -
১] ফাটল ও চ্যুতির সৃষ্টি - ভূমিকম্পের ফলে ভূপৃষ্ঠে অসংখ্য ফাটল ও চ্যুতির সৃষ্টি হয়। এই সব ফাটলের মধ্যে দিয়ে ভূগর্ভস্থ গরম জল ও বাষ্প বাইরে বেরিয়ে আসে। আবার চ্যুতির সৃষ্টি হলে ভূভাগ উপরে উঠে বা নিচে নেমে স্তূপ পর্বত ও গ্রস্ত উপত্যকার সৃষ্টি করে।
২] নদীর গতিপথ পরিবর্তন - ভূমিকম্পের ফলে ধ্বস জনিত কারণে নদীর গতিপথ রুদ্ধ হলে নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। যেমন - ১৯৫০ সালের ভূমিকম্পে আসামের দিবং নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছিল।
৩] সমুদ্রতলের পরিবর্তন - অনেক সময় সমুদ্র নিচে প্রবল ভূমিকম্প হলে সমুদ্র তলদেশের কোন অংশ উত্থিত হয়ে সামুদ্রিক দ্বীপ আবার অনেক সময় সমুদ্র মধ্যবর্তী অনেক দ্বীপ সমুদ্র তলদেশে অবনমিত হয়ে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
৪] সুনামি - সমুদ্র তলদেশে প্রবল ভূমিকম্প সংঘটিত হলে সমুদ্রের জল ব্যাপক ও বিধবংসী তরঙ্গের আকারে উপকূলের দিকে এগিয়ে এসে ব্যাপক ধবংসলীলা চালায়। এই সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস কে সুনামি বলে। যেমন - ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে এই রূপ সুনামি সংঘটিত হয়েছিল।
৫] ধ্বংসলীলা - ভূমিকম্প যেহেতু আকস্মিক ঘটনা, তাই হঠাৎ করে প্রবল ভূমিকম্প হলে শহর ও নগর নিমেষে ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়। অসংখ্য মানুষ, জীবজন্তু মৃত্যু মুখে পতিত হয়। রাস্তাঘাট, রেল, বাঁধ, সেতু ধ্বংস হয়ে যায়।
ভূমিকম্প বলয় - সারা পৃথিবীব্যাপী ভূমিকম্প হলেও সর্বত্র সমান ভাবে ভূমিকম্প হয় না। পৃথিবীর এমন কিছু অঞ্চল রয়েছে যেখানে সবথেকে বেশি ভূমিকম্প হয়ে থাকে। পৃথিবীর এই অঞ্চল গুলিকে তিনটি বলয়ে ভাগ করা হয়। যথা -
১] প্রশান্ত মহাসাগরীয় বলয় - প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে অবস্থান করা প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা বরাবর পৃথিবীর ৬৫% ভূমিকম্প হয়ে থাকে। এই বলয়ে অবস্থিত জাপানকে ভূমিকম্পের দেশ বলা হয়।
২] মধ্য মহাদেশীয় বলয় - হিমালয় ও আল্পস পার্বত্য অঞ্চলকে কেন্দ্র করে অবস্থিত এই বলয়ে পৃথিবীর ২১% মতো ভূমিকম্প হয়।
৩] মধ্য আটলান্টিক বলয় - আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝ বরাবর বিস্তৃত মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা টি প্রতিসারী পাত সীমান্তে অবস্থিত হওয়ায় এখানে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়ে থাকে।
0 মন্তব্যসমূহ