ভারতের জাতীয় আয়:(India's national income).

 ১৯৪৯ সালের জাতীয় আয় কমিটির( National Income Committee) মতে “একটি নির্দিষ্ট সময়ে (মূলতঃ ১বছরে) দেশের উৎপাদিত দ্রব্য ও পরিষেবার মােট মূল্যকে বলে জাতীয় আয়।” জাতীয় আয় একটি বহমান ধারণা(National Income is a flow not a stock)।



  • জাতীয় আয়ের ধারণা:
(১) মােট জাতীয় আয় (Gross National Product বা GNP): GNP হল কোনাে দেশের সম্পূর্ণ বা পরিপূর্ণ উৎপাদিত দ্রব্য ও পরিষেবার মােট মূল্যমান। GNP পরিমাপ করা হয় নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য। সাধারণতঃ এটি হয় ১বছরের জন্য। GNP হল উক্ত দেশের নাগরিকদের দ্বারা আয় করা অর্থ।
GNP = GDP + X - M

  • GDP(Gross Domestic Product):
GDP বা মোট দেশজ আয় হল কোনাে দেশের সীমার মধ্যে উৎপাদিত সকল মানুষের। দ্বারা উৎপাদিত দ্রব্য ও পরিষেবার মূল্য। GDP- এর মধ্যে যেসব বিদেশী মানুষ দেশের সীমার মধ্যে অবস্থিত এবং তাদের উৎপাদিত দ্রব্য ও পরিষেবার মূল্যও GDP-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। X- বিদেশ থেকে অর্জিত আয় এবং M- বিদেশাগত আয়। যদি X = M হয়, তবে GNP = GDP.

  • নীট জাতীয় আয়(NNP-Net National Product):
GNP থেকে অবক্ষয় মূল্য (Depreciation value)
বিয়ােগ করলে NNP হয়।
NNP = GNP — Depreciation.

  • জাতীয় আয় (NI - National Income):
NNP দুইভাবে পরিমাপ করা যায়। একটি হল বাজার দরের উপর (NNP at Market Price বা NNPmp) এবং উৎপাদনকারীর উপর (NNP at Factor Price বা NNPrc)। NNPFC- কে বলা হয় জাতীয় আয় । NNPFC বা NI = NNP, re – অপ্রত্যক্ষ কর ( IT - Indirect Tax ) + ভরতুকি ( Subsidy)।
  • ব্যক্তিগত আয় ( Personal Income ): 

দেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত আয় হল উপার্জিত আয় থেকে সমস্ত করকে বাদ দিলে যা থাকে সেটাই । ব্যক্তিগত আয় হল প্রবাহিত ধারণা ( Personal Income is a flow concept)
ব্যক্তিগত আয় (Personal Income): জাতীয় আয় ( National Income) - কর্পোরেশনের অদেয় লভ্যাংশ ( Undistributed Profits of Corporation) – সামাজিক সুরক্ষার জন্য দেয় অর্থ ( Payments for social security provisions) - কর্পোরেট কর (Corporate Tax) + সরকারের দেয় অর্থ (Government transfer payments) + ব্যবসায়ে দেয় অর্থ (Business transfer payments) + সরকারের দেয় নীট সুদ (Net interest paid by government)।

  • খরচযােগ্য ব্যক্তিগত আয় (Disposable Personal Income - DPI): 

ব্যক্তিগত আয় থেকে প্রত্যক্ষ কর বাদ দিলে খরচযােগ্য ব্যক্তিগত আয় পাওয়া যায়। DPI = PI - DT ।


  • জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতি (Methods of Measuring National Income): 

সাইমন কুজনেট (Simon Kuznets) - এর মতে তিনপ্রকার পদ্ধতিতে জাতীয় আয় পরিমাপ করা যায়।
(১) দ্রব্য পদ্ধতি (Product Method): সাইমন কুজনেট এই পদ্ধতির নতুন নাম দেন দ্রব্য পরিষেবা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে এক বছরে উৎপাদিত দ্রব্য ও পরিষেবার নীট মূল্য নির্ণয় করা হয়।
(২) আয় পদ্ধতি (Income Method): এই পদ্ধতিতে দেশের সব মানুষের মােট আয় নির্ণয় করা হয়।
(৩) গ্রহণ পদ্ধতি (Consumption Method): এই পদ্ধতি ব্যয় পদ্ধতি (Expenditure Method) নামেও পরিচিত। আয়র্কে যেহেতু দুইভাগে ব্যবহার করা যায় তাই মােট জাতীয় আয় হল মােট গ্রহণ (consumption) ও মােট সঞ্চয়ের (Savings) যােগফল। ভারতে জাতীয় আয় পরিমাপের ক্ষেত্রে আয় পদ্ধতি ( Income Method ) ও দ্রব্য পদ্ধতির ( Product Method ) একটি সংযুক্তি ব্যবহার করা হয়।

  • ভারতে জাতীয় আয়ের পরিমাপ (Estimates of National Income in India): 
স্বাধীনতাপূর্ব ভারতবর্ষে জাতীয় আয় পরিমাপের বিশেষ কোনাে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ১৮৬৮ সালে দাদাভাই নৌরােজী প্রথম জাতীয় আয় পরিমাপের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার বই ‘ Poverty and Un British Rule in India'- এ ভারতের মাথাপিছু জাতীয় আয় বার্ষিক ২০ টাকা বলে উল্লেখ করেন। এই তথ্যকে অনুসরণ করে আরাে কয়েকজন অর্থনীতিবিদ ভারতের মাথাপিছু জাতীয় আয় পরিমাপ করেন সেগুলি হল মাথাপিছু আয় (টাকায়) ফিল্ডলে শিরাস (Findlay Shirras) - ৪৯ (১৯১১) ওয়াদিয়া ও জোশি (Wadia and Joshi) - ৪৪.৩০ (১৯১৩-১৪) ড . ভি . কে আর . ভি . রাও (Dr. V. K. R. V Rao) -৭৬ (১৯২৫-২৯)।
স্বাধীনতার পরে ১৯৪৯ সালে প্রফেসর প্রশান্তচন্দ্র মহানবীশের নেতৃত্বে ভারত সরকার জাতীয় আয় কমিটি (National Income Committee) গঠন করে। এই কমিটির প্রথম রিপাের্ট জমা পড়ে ১৯৫১ সালে এবং ফাইনাল রিপাের্ট জমা পড়ে ১৯৫৪ সালে। ১৯৫৪ সালের রিপাের্টটি প্রস্তুত হয় ১৯৫০-৫৪ সালের গৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে। এই রিপাের্ট মােতাবেক মােট জাতীয় আয় পরিমাপ করা হয় ৮৬৫০কোটি টাকা এবং মাথাপিছু আয় ২৪৬.৯০ টাকা। পরে সরকার জাতীয় আয় পরিমাপের জন্য কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যা (CSO: Central Statistical Organisation) গঠন করেন। সাম্প্রতিক সময়ে CSO ১৯৯৩-৯৪ - কে ভিত্তি করে ধরে জাতীয় আয়ের নতুন পরিমাপ শুরু করেছে। অর্থনীতির তিনটি ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে জাতীয় আয় পরিমাপ করা হয়। যেগুলি হল-
(১) প্রাথমিক ক্ষেত্র (কৃষি, বন, ফিশারি, খনি),
(২) গৌণ ক্ষেত্রে (কনসট্রাকশান ও ম্যানুফ্যাকচার শিল্প),
(৩) টারশিয়ারি ক্ষেত্র (বাণিজ্য, পরিবহণ, যােগাযােগ, ব্যাঙ্কিং, বীমা, রিয়েল এস্টেট, গােষ্ঠীগত ও ব্যক্তিগত পরিষেবা)।
সরকার পরিকল্পনা করছে CSO এবং NSSO- কে সংযুক্ত করার যার ফলে দেশে পরিসংখ্যানের জাল বিস্তৃত করা যায়। ভাবা হয়েছে এই নতুন সংস্থার নাম হবে NSO (National Statistical Organisation)। এই সংস্থার সর্বোচ্চ পদ হবে ভারতের মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ (Chief of Statistician of India) এবং এই পদটি মুখ্য সেক্রেটারির সমমর্যাদার হবে।



0 মন্তব্যসমূহ